আমাদের ই-পেপার পড়তে ভিজিট করুন
ই-পেপার 📄
দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
ঢাকাWednesday , 3 December 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. কর্পোরেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. বিনোদন
  12. বিশেষ প্রতিবেদন
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কোনো ঘোষণা ছাড়াই সয়াবিনের দাম লিটারে বাড়ল ৯ টাকা, খোলা তেল ৫ টাকা

Link Copied!

কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম নীরবে বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার এক লাফে প্রতি লিটারে ৯ টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য তৈরি করেছে বাস্তবিক চাপ। ভোক্তা–অধিকারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন—আগাম নোটিশ ছাড়া এভাবে কৌশলে দাম বৃদ্ধি চরম অনৈতিক; সরকারের উচিত বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা।

এ ঘটনায় দুই পক্ষ – বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ—পাল্টাপাল্টি মন্তব্য দিয়েছেন। কোম্পানিগুলোর দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বেড়েছে; তাই সরকারকে অবহিত করেই দাম সমন্বয় করা হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, তারা ব্যবসায়ীদের আবেদন পেয়েছে বটে—তবে দাম বাড়ানোর অনুমোদন এখনো দেওয়া হয়নি।

ঢাকার কাঁঠালবাগান, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন বাজারে গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে—রূপচাঁদা, তীর, পুষ্টি, ফ্রেশসহ প্রায় সব ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল নতুন দরে বিক্রি হচ্ছে।
নতুন করে বাজারে আসা পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৬৫ টাকায়
এক লিটারের বোতল ১৯৮ টাকা দরে বিক্রি হলেও—এতদিন এটি ছিল ১৮৯ টাকা
তবে এক ও দুই লিটারের নতুন দরের বোতল এখনো পর্যাপ্ত সরবরাহ হয়নি বাজারে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে ফ্রেশ ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতল কিনে ফেরার পথে বেসরকারি চাকরিজীবী রনি তালুকদার জানান, নতুন দরে তেল বাজারে এসেই গেছে। কয়েকটি দোকানে ঘোরাঘুরি করে তিনি পরিচিত দোকানদারের কাছ থেকে পুরোনো দরে—৯২০ টাকায়—বোতল নিয়েছেন, যদিও বোতলে ছাপা দাম ছিল ৯২২ টাকা। একই মার্কেটে কিছু দোকানে নতুন ৯৬৫ টাকার বোতল পাওয়া যাচ্ছিল।

কারওয়ান বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুর রব স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. নাঈম বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই কোম্পানিগুলো নতুন দামের বিষয়ে তাদের সতর্ক করেছে এবং গত দুই দিন ধরে সেই বাড়তি দরের তেল সরবরাহ করছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা যায়—১০ নভেম্বর কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে এবং ২৪ নভেম্বর থেকে তা কার্যকরের প্রস্তাব দেয়। সমিতি যে দাম নির্ধারণ করেছে—

  • প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন: ১৯৯ টাকা

  • পাঁচ লিটারের বোতল: ৯৮৫ টাকা

  • খোলা সয়াবিন: ১৭৯ টাকা

  • পাম অয়েল: ১৬৯ টাকা

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি—সরকার এখনো ব্যবসায়ীদের এ অনুমতি দেয়নি। তবু কোম্পানিগুলোর যুক্তি—আইন অনুযায়ী তারা এ সমন্বয় করতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে যা বলা আছে

‘কন্ট্রোল অব অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট ১৯৫৬’–এর আলোকে ২০১১ সালে জারি করা আদেশ অনুযায়ী—উৎপাদক, পরিশোধক বা আমদানিকারক কোনো অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম বাড়াতে বা কমাতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে তা করতে হবে, এবং কমপক্ষে ১৫ দিন আগে মনিটরিং সেল, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন—এই নিয়ম অনুসারেই তারা দামের সমন্বয় করেছেন।

ক্যাবের মন্তব্য

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন—সরকারের অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত দাম নেওয়া নিঃসন্দেহে অন্যায়।
জাতীয় ভোক্তা–অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিষয়টি তদন্ত করতে পারে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে।

তিনি মনে করিয়ে দেন – রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা প্রায়শই দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন। রমজানে সরবরাহে ঘাটতি রোধে সরকারকে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।

কোম্পানি ও সরকারের অবস্থান

অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মোল্লার দাবি – সরকারকে জানিয়েই দাম বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন—দাম বাড়ানো হয়েছে কি না তা জানা নেই; ব্যবসায়ীরা চিঠি দিয়েছেন, তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। সরকারের অনুমতি ছাড়া কীভাবে দাম সমন্বয় করা হয়েছে – তা বুধবার খতিয়ে দেখা হবে।

গত অক্টোবরে–ও সরকারের অনুমতি ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছিল ব্যবসায়ীরা। তখন সরকারের কঠোর অবস্থানে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।