দেশে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় সরকার বড় ধরনের আপডেট আনছে—পাসপোর্ট এখন সরাসরি যুক্ত হবে এনআইডির বায়োমেট্রিক ডাটার সঙ্গে। পুলিশি ভেরিফিকেশন প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় পরিচয় যাচাইকে অটোমেটেড, নির্ভুল ও জালমুক্ত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি এনরোলমেন্ট সিস্টেমে আবেদনকারীর এনআইডির ছবি স্ক্রিনে দেখানোর অপশন সক্রিয় করা হয়েছে। পাশাপাশি এনআইডির আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে চূড়ান্ত বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন যুক্ত করার প্রস্তাব নীতিনির্ধারণী মহলে আলোচনায় আছে।
নতুন সিস্টেম চালু হলে আবেদনকারীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সরাসরি এনআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে মিলিয়ে যাচাই করা যাবে। এনরোলমেন্ট ডেস্কে নেওয়া ছবি এনআইডির ছবির সঙ্গে ফেস-ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে মিলবে। কোনো অসামঞ্জস্য দেখলে তা রেড ফ্ল্যাগ হিসেবে ম্যানুয়াল রিভিউতে যাবে।
সাম্প্রতিক এক মন্ত্রণালয় সভায় বিষয়গুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনকার ডেমোগ্রাফিক ম্যাচিং অনেকটা নির্ভরযোগ্য হলেও, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বরাবরই বলছে—“ডেমো তথ্য নয়, বায়োমেট্রিক ম্যাচিং বাধ্যতামূলক হোক।”
পুলিশ ভেরিফিকেশন বন্ধ হওয়ায় পরিচয় নিশ্চিতকরণে বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আগের মতো স্থানীয় পুলিশ গিয়ে ঠিকানা, পেশা, পরিবার যাচাই করছে না। তাই এনআইডির ফটো, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, বায়োমেট্রিক ডাটাই এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা স্তর।
ই-পাসপোর্ট বিভাগ ইতোমধ্যে অফিসারদের মনিটরে এনআইডির ছবি দেখানো শুরু করেছে—এটি মাঠ পর্যায়ে প্রথম-স্তরের ভিজ্যুয়াল চেক হিসেবে কাজ করছে। তবে প্রযুক্তিবিদদের মতে, শুধু ছবি দেখে ম্যাচিং শতভাগ নির্ভুল নয়—আলো, বয়স, ক্যামেরা, ওজনসহ নানা কারণে ভিন্নতা থেকে যেতে পারে। তাই অটোমেটেড বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনই মূল।
এক উপপরিচালক বলেন, “মেশিনভিত্তিক বায়োমেট্রিক চেক ছাড়া পূর্ণ নিরাপত্তা পাওয়া সম্ভব নয়। এনআইডির ডাটাবেইজ পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে।”
প্রস্তাবিত সিস্টেমে এনরোলমেন্ট কাউন্টারে নেওয়া আঙুলের ছাপ এনআইডির ডাটার সঙ্গে অটোমেটিক মিলবে। ফেস ভেরিফিকেশনও একইভাবে কাজ করবে।—অমিল দেখলে কেস আলাদা হবে।
প্রযুক্তিবিদদের মতে, এর দুটি বড় সুবিধা হবে:
• জাল পরিচয়ে পাসপোর্ট করা বন্ধ হবে
• এক ব্যক্তি একাধিক নামে পাসপোর্ট নিতে পারবে না
এতে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানও শক্ত হবে।
অন্যদিকে, গোপনীয়তা নিয়ে সিভিল সোসাইটি সতর্ক করেছে—বায়োমেট্রিক ডেটা খুবই সেনসিটিভ। তাই শক্তিশালী ডেটা সিকিউরিটি, সীমাবদ্ধতা ও অপব্যবহাররোধ সংক্রান্ত নীতি দরকার। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সব শেয়ারিং এনক্রিপ্টেড হবে, তাৎক্ষণিক ম্যাচিং ছাড়া কোনো ডেটা সংরক্ষণ বা ট্র্যাকিং হবে না।
এনআইডি ও পাসপোর্ট বিভাগ প্রযুক্তিগত সংযোগের প্রস্তুতি শুরু করেছে। কয়েকটি আঞ্চলিক অফিসে পাইলট হিসেবে বায়োমেট্রিক ম্যাচিং চালুর প্রস্তাব আছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন সিস্টেম কার্যকর হলে ই-পাসপোর্টের গ্লোবাল গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার নিরাপত্তা মূল্যায়নে। তবে সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল, শক্তিশালী সার্ভার, এবং ডেটা সিকিউরিটি।
খরচ কমার পাশাপাশি অপরাধী শনাক্তও সহজ হবে—কারণ এনআইডি তৈরির সময়ই বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়। একই প্রক্রিয়া দুইবার করার দরকার নেই।
শিশুদের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক নেওয়া প্রযুক্তিগতভাবে কঠিন। তাই তাদের জন্য অনলাইন জন্মসনদ নম্বরই মূল আইডেন্টিফায়ার হবে, যা অনলাইনে যাচাইযোগ্য। এতে জাল জন্মসনদ ব্যবহার করে পাসপোর্ট নেওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারির পরিপত্রে বলা হয়—
• নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এনআইডির অনলাইন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না
• বিদেশে থাকা বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মসনদের তথ্যই যথেষ্ট
• পুনঃইস্যুতে মূল তথ্য পরিবর্তন হলে এনআইডির তথ্য দিয়ে নতুন পাসপোর্ট করা যাবে


