বরগুনায় গত আট মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নিয়েছে। জেলায় মোট ৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের অন্য কোনো জেলায় এমন সংখ্যক রোগী বা প্রাণহানি দেখা যায়নি।
চলতি বছর সারাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৭৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ২২ হাজার রাজধানীর রোগী। বাকিদের অধিকাংশই শহরের বাইরে। তবুও জেলা–উপজেলা পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই। সিটি করপোরেশনগুলোও বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন, আগামী কয়েক দশক মফস্বলে ডেঙ্গু ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হবে। তাঁর ভাষায়, এটি আটকানো খুবই কঠিন। স্থানীয় প্রশাসন বা ইউনিয়ন পর্যায়ের উদ্যোগে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ও অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেছেন, মশা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে দেখানো কর্মসূচিতেই জোর দেওয়া হয়। লোকদেখানো পদক্ষেপের কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয় না। এডিস ও কিউলেক্সের জীবনচক্র, আচরণ এবং প্রজনন পদ্ধতি ভিন্ন, তাই একই কৌশলে দুই ধরনের মশা দমন সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশনগুলো এই জায়গায় ভুল করে থাকে।
এদিকে চলতি মাসে দেশের সর্বত্র ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বেড়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর গ্রাফ উঁচু হচ্ছে। কীটতত্ত্ববিদরা আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন, তবে সেই সতর্কবার্তার ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি খারাপ হলে কেবল স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রম দেখা যায়।
সারা দেশে আক্রান্ত বাড়লেও কাগজে-কলমে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হিসাব দেখা যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়। তারা দাবি করছে, সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসা রোগীদের উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ সিটিতে চিকিৎসা নেয়, ফলে সংখ্যাটি কাগজে বেশি দেখায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী জহিরুল ইসলাম জানান, জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত ফগিং বা ওষুধ প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, যেখানে জনসাধারণ ও সুশীল সমাজকে যুক্ত করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। শীত না আসা পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ কমার সম্ভাবনা নেই।


