অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন গণভোট আয়োজনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলোকে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, ইসি সচিব আখতার আহমেদ এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে বাড়বে প্রস্তুতির পরিধি
বৈঠকে ইসি সচিবালয় জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক ভোটকেন্দ্র তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, তবে কেন্দ্র ও কর্মকর্তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে বাড়তি বাজেট, জনবল ও লজিস্টিক সহায়তা এখন থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, যদি দুটি ভোট আলাদা দিনে হয়, তবে ব্যয় ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি প্রায় দ্বিগুণ হবে, যা অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত বরাদ্দ ছাড়া সম্ভব নয় বলে জানায় ইসি।
মাঠ প্রশাসন ও অবকাঠামো উন্নয়ন
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মাঠ প্রশাসনকে নির্বাচনি সময় হেলিপ্যাড সংস্কারের নির্দেশ দিতে হবে, যাতে দুর্গম এলাকায় যাতায়াত সহজ হয়। পাশাপাশি, প্রতিটি উপজেলায় একজন চিকিৎসক, একজন নার্স এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হবে।
ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা সচল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নথিভুক্ত থাকে এবং অনিয়ম শনাক্ত করা যায়। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনকে কেন্দ্রসংলগ্ন সড়ক ও প্রবেশপথ সংস্কারের দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনি প্রচারণায় বিটিভি ও সংসদ টিভি ব্যবহারের উদ্যোগ
ইসি জানায়, গণভোট ও নির্বাচনি সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিটিভি ও সংসদ টেলিভিশন ব্যবহার করা হবে। ভোটারদের সচেতন করতে নিউজ, বিজ্ঞপ্তি ও ফ্ল্যাশ বার্তা প্রচারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে নাকি আলাদা দিনে হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে যেভাবেই হোক, এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।”
বাজেট ও জনবল নিশ্চিতকরণ
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “খসড়া কেন্দ্রতালিকা তৈরি হয়েছে। প্রশাসন সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেবে। একই দিনে ভোট হলে ব্যয় বেড়ে যাবে, তাই অর্থ বরাদ্দ আগেই নিশ্চিত করতে হবে।”
অর্থ বিভাগের সচিবকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “বাজেট অনুমোদন দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, যাতে সময়মতো অর্থ ছাড় দেওয়া যায়।”
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়ন
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সরকারি শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষিত কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যোগ্য শিক্ষকের তালিকা তৈরিতে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুন পোস্টাল ব্যালট ও এআই মনিটরিং সেল
প্রবাসী ও সরকারি কর্মকর্তা ভোটারদের জন্য নতুন পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। পরীক্ষামূলক অ্যাপ চালু হবে আগামী ১৬ নভেম্বর।
এ ছাড়া, ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা রোধে একটি এআই-নির্ভর মনিটরিং সেল গঠনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এই সেল দ্রুত তথ্য যাচাই ও প্রতিক্রিয়া জানাবে।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
পরিশেষে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠক শেষে বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। সেই উদ্দেশ্যে সব মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই কার্যকর প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।”

 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
 
                                     
                                 
                                 
                                 
                                