বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম সালমান শাহ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তার মৃত্যু দেশের লাখো দর্শককে শোকাহত করেছিল। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় রহস্যজনকভাবে তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন সেটিকে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়েছিল। দীর্ঘ ২৯ বছর পর সেই ঘটনা হত্যা মামলায় রূপ নিয়েছে।
মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেওয়ার পর নতুন আলোচনায় এসেছে ১৯৯৭ সালের রেজভী আহমেদ ফরহাদের জবানবন্দি। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, “আমরা সালমান শাহকে হত্যা করেছি। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে সাজানো হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডে সামিরা ও তার পরিবারের সদস্যসহ আরও অনেকে জড়িত ছিলেন। আমি হত্যার সময়ও উপস্থিত ছিলাম।”
জবানবন্দি অনুযায়ী, সালমান শাহর মৃত্যু ছিল ১২ লাখ টাকার চুক্তিভিত্তিক। রেজভী জানিয়েছেন, এই চুক্তি করেছিলেন সালমান শাহর শাশুড়ি লতিফা হক লুসি। পরিকল্পনায় ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদসহ আরও কয়েকজন।
রেজভী ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে গুলিস্তানের একটি বারে সালমান শাহকে হত্যা করার পরিকল্পনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ, ছাত্তার, সাজু ও রেজভী। ফারুক ২ লাখ টাকা বের করে জানান, সামিরার মা এই অর্থ দিয়েছেন। মোট ১২ লাখ টাকার চুক্তি হয়, যা কাজের আগে ও পরে ভাগ করা হবে। এরপর হত্যার জন্য প্লাস্টিকের দড়ি, ক্লোরোফর্ম, রিভলবার ও সিরিঞ্জসহ সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হয়।
রেজভী জানান, ৫ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটায় ডন, ডেভিড, ফারুক ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ইস্কাটনের বাসায় যান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সালমানের স্ত্রী সামিরা, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি ও আত্মীয়া রুবি। ঘুমন্ত সালমানকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করা হয়। কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরে আজিজ ইনজেকশন পুশের নির্দেশ দেন।
রেজভীর দাবি, ইনজেকশন প্রয়োগ করে সালমান শাহকে হত্যা করা হয় এবং মরদেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা সাজানো হয়।
সালমান শাহ হত্যা মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রধান আসামি নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, নায়কের সাবেক শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রেজভী আহমেদ ফরহাদ।
