রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনায় লাগাম টানতে না পারলে ভারতের ওপর আরোপিত মার্কিন শুল্ক কমানো হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হাসেট। বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
কেভিন হাসেট বলেছেন, ভারত যদি রুশ অপরিশোধিত তেলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতীয় আমদানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত জরিমানা হিসেবে আরোপিত শুল্ক কমাবেন না। মার্কিন ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হাসেট ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনাকে ‘‘জটিল’’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, মার্কিন পণ্যের জন্য বাজার খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে ভারত। এক্ষেত্রে ভারত যদি না নড়ে, তাহলে আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও নড়বেন না। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে; এই মুহূর্তে ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বের অন্য যেকোনও দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনায় ভারতের ওপর জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হাসেট বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা ‘জটিল’ হওয়ার একটি আংশিক কারণ হলো আমরা রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি ও শান্তি চুক্তি নিশ্চিত করে কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছি। এছাড়া আমাদের পণ্যের জন্য বাজার খোলার ব্যাপারে ভারতীয়দের উদাসীনতাও রয়েছে।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনাকে ম্যারাথনের সঙ্গে তুলনা করে হাসেট বলেন, আলোচনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন এবং চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছানোর আগে ‘উত্থান-পতন’ উভয়পক্ষকে মেনে নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘‘বাণিজ্য আলোচনার দিকে তাকালে দেখা যায়, আমরা সবাই শিখেছি যে দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রাখতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে যে চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছানোর আগে কিছু উত্থান-পতন হবে।’’
• শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের টিমের অবস্থান কী?
হাসেটের মন্তব্যের সঙ্গে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের মন্তব্যের মিল রয়েছে। এর আগে, বেসেন্ট বলেছিলেন, ভারতের ওপর উচ্চ শুল্ক শুধু ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার জন্য নয়, বরং চলমান দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার জন্যও।
বুধবার ফক্স বিজনেসকে বেসেন্ট বলেছেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম, মে বা জুনে আমরা একটি চুক্তি করতে পারব; ভারত হয়তো প্রথম চুক্তি করবে। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে এগিয়েছে।’’
তিনি বলেন, আলোচনার সময় নয়াদিল্লি কিছুটা অসহযোগী ছিল এবং ‘‘এটি অত্যন্ত জটিল সম্পর্ক।’’
‘‘আমি মনে করি ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র। আর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত আমরা একমত হতে পারব।’’
• ভারতের অবস্থান
ভারত স্পষ্ট করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে দৃঢ় অবস্থানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে দিল্লি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে কখনো আপস করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কে প্রায় ৪৮.২ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতীয়রা কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নতুন শুল্কের প্রাথমিক প্রভাব সীমিত মনে হলেও অর্থনীতিতে তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি