যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে ঘোষিত বাড়তি শুল্কভারের একটা বড় অংশ রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে মার্কিন ব্র্যান্ড-ক্রেতারা। বাড়তি শুল্কহারের কত শতাংশ রপ্তানিকারকরা বহন করতে রাজি আছেন, তা জানতে চায় তারা। দুই দেশের সরকার পর্যায়ের আলোচনার মধ্যেই এ নিয়ে তারা দরকষাকষি করছে। শুল্ক যদি ঘোষিত ৩৫ শতাংশই বহাল থাকে তাহলে তার কত অংশ রপ্তানিকারকরা নিতে রাজি কিংবা শুল্ক কমে ৩০ শতাংশ হলে কত, ২৫ শতাংশ হলে কত কিংবা ২০ শতাংশ হলে কত অংশ নেবেন রপ্তানিকারকরা– এ রকম একাধিক বিকল্প হার নিয়ে রপ্তানিকারকদের কাছে প্রতিশ্রুতি আদায়ের কৌশল খাটানো হচ্ছে।
কয়েকজন রপ্তানিকারক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে ক্রেতাদের এ ধরনের কৌশলের কথা জানা গেছে। এমন একজন রপ্তানিকারক উদ্যোক্তা সমকালকে জানান, তাঁর কারখানার ক্রেতাদের এ ধরনের প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি। কারণ শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে সরকার। এখন ৩৫ শতাংশ ধরে যদি বাড়তি শুল্ক রপ্তানিকারকরা ভাগাভাগি করে নেন তাহলে আলোচনা শেষে শুল্ক যতই কম হোক না কেন প্রতিশ্রুতি দেওয়া শুল্কের ভাগ থেকে আর সরে আসা যাবে না। আলোচনায় শেষ পর্যন্ত শুল্ক যদি ২০ শতাংশও ধার্য হয় তখনও শুল্কভারের হার কমাবে না তারা। শীর্ষস্থানীয় ওই রপ্তানিকারক তার পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের নিয়ে এ রকম বেকায়দায় আছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। রপ্তানি প্রক্রিয়ায় থাকা পণ্যের দর কমাতে চাপ দিচ্ছে কোনো কোনো ব্র্যান্ড-ক্রেতা  প্রতিষ্ঠান। পাইপলাইনে থাকা এ রকম পোশাকের  আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে নতুন রপ্তানি আদেশ আপাতত স্থগিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদন করা কারখানাগুলো এ রকম বিপদের মুখে রয়েছে।
সাধারণত রপ্তানি আদেশের চুক্তির পর পণ্যের মান কিংবা গুণগত মান, নকশায় আর কোনো পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না। চুক্তিতে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছাতে আর্থিক লোকসান মেনে নিয়ে আকাশপথে পণ্য পৌঁছে দিতে বাধ্য হন রপ্তানিকারকরা।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে এমন কারখানার সংখ্যা এক হাজার ৩২২। উৎপাদন এবং প্রত্যক্ষ রপ্তানিতে থাকা সক্রিয় কারখানার সংখ্যা দুই হাজার। ৫০০ কারখানা সাব-কন্ট্রাক্ট বা ঠিকা কাজ করে থাকে। এ পর্যন্ত মোট সাত হাজার ২০০ কারখানা বিজিএমইএ থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। বাকি কারখানাগুলো বিভিন্ন সময়ে বন্ধ এবং একীভূত হয়েছে। বিজিএমইএর বাইরে পোশাক খাতের নিট ক্যাটেগরির পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন-বিকেএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ৮৫০টি। এর মধ্যে ৩২৭টি কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। অবশ্য এর মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ উভয় সংগঠনের কিছু সদস্য রয়েছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু সমকালকে বলেন, যেসব কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর বেশি নির্ভর, যেমন মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যায়, ওইসব কারখানা বেশি বিপদের মুখে রয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ কতটা হতে পারে তা নির্ভর করছে শেষ পর্যন্ত কত হারে শুল্ক আরোপ হয়। ঘোষিত ৩৫ শতাংশ হারই যদি কার্যকর হয়, অন্যদিকে আমাদের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার শুল্কহার কম হয়, তাহলে ক্ষতিটা আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।
বিজিএমইএর পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে মোট রপ্তানির ২০ শতাংশ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে এমন কারখানার সংখ্যা ৮২২। রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। মোট রপ্তানির ২১ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা কারখানার সংখ্যা ১৭৬টি। ৪১ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ৮৭টি। ৬১ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত  ৯১টি।  ৮১ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কারখানা ৪৬টি। আর মোট রপ্তানির ৯১ থেকে ১০০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা কারখানার সংখ্যা ১০০টি। যুক্তরাষ্ট্রে এসব কারখানার রপ্তানির পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো। প্রতিটি কারখানায় গড়ে এক হাজার ৪০০ শ্রমিক কাজ করছেন। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তারাও এখন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে।

                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    