রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে পিতা ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক তরুণী ও তার দুই কিশোরী বোন। তাদের মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। নির্যাতনের শিকার বড় মেয়ে স্বার্না (২২) নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পল্লবী থানায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্বার্নার বাবা মোঃ ওয়াহেদুজ্জামান সেন্টু (৫০) দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী ও সন্তানদের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। তিনি একাধিকবার তার স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করেন এবং এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় স্ত্রী ও সন্তানদের উপর নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। চার বছর আগে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তিনি আরও একটি বিয়ে করেন। এরপর থেকে সৎমা মোসাঃ রাহেলা বেগমের সাথে মিলে ছোট দুই মেয়ের ওপরও নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
বড় মেয়ে স্বার্না জানান, ছোট দুই বোনের কষ্ট দেখে তিনি পিতার বাড়িতে থেকে তাদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তখন থেকে পিতা এবং তার সৎমা তাকে ও তার বোনদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ, হুমকি এবং বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন।
১২ জুলাই (শনিবার) দুপুর ১২টার দিকে এক ভয়াবহ ঘটনার কথা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওয়াহেদুজ্জামান ও রাহেলা বেগম তার ছোট দুই বোনকে বাসা ছাড়তে বললে তারা অস্বীকার করলে শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। দুই কিশোরীকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়, শরীরে নীলাফুলা জখম হয়। তাদের চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে স্বার্নাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়, এমনকি হত্যার উদ্দেশ্যে তার তলপেটে লাথি মারা হয়। একপর্যায়ে মরিচের গুঁড়া ছুঁড়ে তাদের চোখ অন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা হত্যার হুমকি দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। পরে আহত অবস্থায় স্বার্নাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তার বোনরা স্থানীয় ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসার সামনে এসে দেখেন ভিতর থেকে গেইট বন্ধ করা।
সন্তানদের আকুতি মিনতি ও স্থানীয়দের অনুরোধেও গেইট খুলতে রাজি হননি পাষণ্ড পিতা সেন্টু ও সৎমা রাহেলা। কয়েক ঘন্টা পরে সাংবাদিক এবং পল্লবী থানা পুলিশের সহায়তায় রাত আনুমানিক সারে এগারোটার দিকে গেইট খুলতে বাধ্য হয়। এসময় সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ায় হুমকি দেন ওয়াহেদুজ্জামান সেন্টু।
পল্লবী থানার একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অভিযোগটি গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়েছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত তারা বাসায় আছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, পিতা যদি এমন হয়, তাহলে মেয়েরা কার কাছে নিরাপদ? আমরা প্রশাসনের কাছে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
উল্লেখ্যে, সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে সম্পাদিত চুক্তিনামাকে উপেক্ষা করে সৎমেয়েদের উপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর মিরপুরের শহীদবাগ এলাকার বাসিন্দা রাহেলা আক্তার ও তার স্বামী ওয়াহেদুজ্জামান সেন্টুর বিরুদ্ধে। স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, এ ঘটনা শুধু পারিবারিক সঙ্কট নয় বরং প্রশাসনিক চুক্তিরও চরম অবমাননা।
সূত্রে জানা যায়, ১৪ জুন ২০২৫ তারিখে রাহেলা আক্তারের পক্ষ থেকে দায়ের করা একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন ২০২৫ তারিখে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট আর্মি ক্যাম্পে বাদী ও বিবাদীসহ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি শালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি বিস্তারিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে উভয়পক্ষের অধিকার ও দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়।
চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, ওয়াহেদুজ্জামানের প্রথম পক্ষের মেয়েরা স্বর্ণা, সুবর্ণা ও তামান্না নিরাপদে তাদের বাবার বাড়িতে অবস্থান করতে পারবে এবং তাদের ভরণপোষণ বাবার দায়িত্বে থাকবে। এছাড়া, স্বামী-স্ত্রী রাহেলা ও ওয়াহেদুজ্জামানকে সংসারে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করে রাহেলা আক্তার তার স্বামীকে প্ররোচিত করে সৎমেয়েদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে তিন মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়, যা এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে যখন চুক্তি হয়, তখন আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম যে পরিবারে শান্তি ফিরবে। কিন্তু এখন যা ঘটছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা শুধু পরিবারের নয়, আইন ও রাষ্ট্রেরও অসম্মান।
অভিযোগ আরও রয়েছে, চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রথম পক্ষের মেয়েদের দ্বারা করা জিডি প্রত্যাহার এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোও একপাক্ষিকভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে সেনাবাহিনীর কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, এই চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এই ঘটনায় পল্লবীর স্থানীয় জনগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দ্রুত অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।