মার্কিন টেক জায়ান্ট গুগল বিল গেটসের পারমাণবিক শক্তি বিষয়ক নতুন কোম্পানি নিউক্লিয়ার ফিউশন স্টার্টআপ ‘কমনওয়েলথ ফিউশন সিস্টেমস (সিএফএস)’-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে। যার আওতায় প্রতিষ্ঠানটি আগামী দশকের মধ্যে ফিউশন শক্তি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিল গেটসের প্রযুক্তি তহবিল ‘ব্রেকথ্রু এনার্জি ভেঞ্চারস’ সমর্থিত এই স্টার্টআপটি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের চেস্টারফিল্ড কাউন্টিতে তাদের প্রথম বাণিজ্যিক ‘এআরসি’ ফিউশন প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। এই প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে গুগল, যা প্রায় ৭৫ হাজার ঘরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
এটি বিশ্বের প্রথম বড় পরিসরের ও সরাসরি গ্রাহকচুক্তির ফিউশন বিদ্যুৎচুক্তি, যা প্ল্যান্টটির মোট উৎপাদনের অর্ধেক। ভবিষ্যতে আরও বিদ্যুৎ কেনার বিকল্প চুক্তিতেও সায় দিয়েছে গুগল।
কমনওয়েলথ ফিউশন সিস্টেমস মূলত এমআইটির প্লাজমা সায়েন্স ও ফিউশন সেন্টার থেকে জন্ম নেয়া একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যারা উচ্চতাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেট ব্যবহার করে ‘টোকামাক ফিউশন প্রযুক্তি’র মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত তারা ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে।
সিএফএস এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বব মামগার্ড বলেন, “এই চুক্তি বাজারে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—ফিউশন বিদ্যুৎ আসছে। এটি কল্পনা নয়, বাস্তব।”
এর আগে, ২০২৩ সালে মাইক্রোসফট ‘হেলিয়ন এনার্জি’ নামক আরেক ফিউশন স্টার্টআপের সঙ্গে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছিল, যার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা ২০২৮।
বর্তমানে যে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তা ‘নিউক্লিয়ার ফিশন বা বিভাজন প্রক্রিয়ায়’, যেখানে পারমাণবিক কণাকে ভাগ করে শক্তি উৎপন্ন করা হয়। কিন্তু ফিউশন বা সংযুক্তিকরণ পদ্ধতিতে হাইড্রোজেনের মতো সাধারণ উপাদান দিয়ে প্রায় সীমাহীন শক্তি তৈরি সম্ভব, যার তেজস্ক্রিয় বর্জ্যও প্রায় নেই বললেই চলে।
এই চুক্তি এমন এক সময়ে হলো, যখন গুগল তাদের সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টে জানিয়েছে, কোম্পানিটি আরও বেশি ‘সবুজ শক্তি’ ব্যবহারের চেষ্টা করছে, বিশেষ করে এআই খাতে বাড়তে থাকা বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে গিয়ে যেন ‘কার্বন নির্গমন’ না বাড়ে।
২০২৪ সালে গুগল ৮ গিগাওয়াট ‘পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি’ কিনেছে এবং তাদের ডেটা সেন্টারের কার্বন নিঃসরণ ১২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যদিও কোম্পানির মোট নির্গমন ১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.১৫ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি।
গুগলের অ্যাডভান্সড এনার্জি বিভাগের প্রধান মাইকেল টেরেল বলেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা এক নতুন সম্ভাবনাময় প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে চাই। এটি ভবিষ্যতের শক্তি চাহিদা মেটানোর রূপান্তরমূলক একটি পদক্ষেপ।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছেন, যা আগামী ২৫ বছরে চতুর্গুণ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে। যদিও তা প্রধানত ফিশনভিত্তিক হবে।
বিশ্বের প্রথম বড় ধরনের এই ফিউশন বিদ্যুৎ চুক্তি ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জ্বালানি শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তথ্যসূত্র: স্ট্রিট জার্নাল