ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সন্নিকটে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধে গতকাল (২০ ডিসেম্বর) চিরশান্তিতে সমাহিত হয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা শহীদ শরিফ ওসমান হাদি। তার দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর এই ঐতিহাসিক সমাধিসৌধ এবং এখানে শায়িত বিশিষ্টজনদের পরিচয় নিয়ে জনমনে নতুন করে আগ্রহ ও আলোচনা তৈরি হয়েছে।
১৯৭৬ সালে ইন্তেকালের পর কবি নজরুল ইসলামের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে এই পবিত্র প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। সময়ের প্রবাহে এই স্থানটি শুধু জাতীয় কবির সমাধিক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তা পরিণত হয়েছে দেশের শ্রেষ্ঠ কিছু চিন্তাবিদ, শিল্পী ও গুণীজনের চিরনিবাসে—একটি নীরব কিন্তু শক্তিশালী জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
জাতীয় কবির সমাধির পাশেই শায়িত আছেন বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার জনক শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। একই প্রাঙ্গণে সমাহিত আছেন প্রখ্যাত শিল্পী ও জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার কামরুল হাসান, যার শিল্পকর্মে প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের আত্মপরিচয় ও সংগ্রামের ভাষা।
এছাড়াও শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এখানে চিরনিদ্রায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল মাতিন চৌধুরী এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আরেক সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মুজাফফর আহমদ চৌধুরী।
সর্বশেষ শহীদ শরিফ ওসমান হাদির দাফনের মধ্য দিয়ে এই সমাধিসৌধের প্রতীকী গুরুত্ব আরও বিস্তৃত ও গভীর হয়েছে। পরিবারের অনুরোধ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ সিদ্ধান্তে তাকে এই মর্যাদাপূর্ণ স্থানে সমাহিত করা হয়। এর ফলে নজরুল সমাধিসৌধ কেবল সাহিত্য ও সংস্কৃতির নয়, বরং সমসাময়িক ইতিহাস ও আন্দোলনের স্মারক হিসেবেও নতুন মাত্রা পেয়েছে।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ জাতীয় কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই প্রাঙ্গণে এলেও, এখন তারা একই সঙ্গে দেশের অন্যান্য গুণীজন ও শহীদদের স্মরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন—যেখানে ইতিহাস, চেতনা ও আত্মত্যাগ এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে।



