আগামী বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবটির নেতৃত্বের দৌড়ে বর্তমান সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার বিপক্ষে মাঠে নামছেন ভিক্টর ফন্ট, মার্ক সিরিয়া ও জাভি ভিলাজোয়ানা। এই নির্বাচনী লড়াইয়ে সবচেয়ে আলোচিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মার্ক সিরিয়া—তিনি ক্ষমতায় এলে যেকোনো মূল্যে লিওনেল মেসিকে ক্যাম্প ন্যুতে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়ে বার্সেলোনা। তারকা ফুটবলারদের উচ্চ বেতন বহন করতে গিয়ে ক্লাবের অর্থনৈতিক কাঠামো কার্যত ভেঙে পড়ে। সেই প্রেক্ষাপটেই ২০২১ সালে দীর্ঘদিনের ঠিকানা ক্যাম্প ন্যু ছাড়তে বাধ্য হন লিওনেল মেসি, যোগ দেন প্যারিস সাঁ জারমাঁতে। এই বিদায় বার্সা রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে—তৎকালীন সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তামেউ নির্বাচনে পরাজিত হন।
পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে হুয়ান লাপোর্তাও মেসিকে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০২২ মৌসুম শেষে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে পিএসজি ছাড়ার সময় মেসির বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জন জোরালো হয়। তবে স্বল্প বেতনে ফেরানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও লাপোর্তা সেই পথে হাঁটেননি। শেষ পর্যন্ত মেসি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে।
ক্লাব ছাড়লেও বার্সেলোনার রাজনীতিতে মেসি এখনো কেন্দ্রবিন্দু। সম্প্রতি ইন্টার মায়ামিকে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ এনে দেওয়ার পর আবারও আলোচনার শীর্ষে আর্জেন্টাইন মহাতারকা। এই আবহেই মার্ক সিরিয়ার ঘোষণা—“আমাদের মেসিকে দরকার। যেকোনো মূল্যে।”
তবে মেসিকে তিনি ঠিক কোন ভূমিকায় ফিরিয়ে আনতে চান—খেলোয়াড়, পরিচালক নাকি অন্য কোনো কৌশলগত অবস্থানে—তা স্পষ্ট করেননি সিরিয়া। নিজের প্রার্থিতা ঘোষণার মঞ্চে তিনি বলেন,
“আমরা চাই আমাদের কিংবদন্তিরা সম্মানের সঙ্গে ক্লাবে ফিরুক। মেসি বার্সেলোনার আত্মার অংশ। তাকে ফিরিয়ে আনতে আমরা সব ধরনের উদ্যোগ নেব।”
সিরিয়ার চোখে মেসি-বার্সেলোনা সম্পর্কটি কেবল মাঠের নয়। তার ভাষায়, “এই সম্পর্ক হওয়া উচিত মাইকেল জর্ডান ও নাইকির মতো—খেলার বাইরেও বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক, স্পনসরশিপ এবং লা মাসিয়ার খেলোয়াড় উন্নয়ন—সবখানেই যার প্রভাব থাকবে।”
তিনি আরও মনে করেন, ক্লাবের চলমান আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতেও মেসি হতে পারেন বড় শক্তি। “ক্লাব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে ঘিরে আমরা বিশাল সম্ভাবনার দরজা খুলতে পারি,” বলেন সিরিয়া।
তবে বাস্তবতা কিছুটা কঠিন। ৩৮ বছর বয়সী মেসি সম্প্রতি ইন্টার মায়ামির সঙ্গে ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছেন। ফলে খেলোয়াড় হিসেবে তার বার্সেলোনায় ফেরা আপাতত দূরবর্তী স্বপ্ন। যদিও ভবিষ্যতে অন্য কোনো ভূমিকায় তাকে ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত করার আগ্রহ স্পষ্ট। এর আগেও আরেক প্রার্থী ভিক্টর ফন্ট জানিয়েছেন, নির্বাচনে জয়ী হলে মেসিই হবে তার প্রথম ফোনকল।
২০২১ সালের বিদায়ের সময় আর্থিক সংকটের কারণে মেসি-বার্সেলোনা সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত হয়ে ওঠে। সেই অধ্যায় মেরামতের অংশ হিসেবে বর্তমান সভাপতি লাপোর্তা ক্যাম্প ন্যুতে মেসির ভাস্কর্য স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও বলেছেন। তবে সিরিয়ার মতে, শুধু স্মারক নয়, সম্পর্ককে জীবন্ত করাই আসল চ্যালেঞ্জ।
মেসি নিজেও বহুবার বলেছেন, ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে তিনি বার্সেলোনায় ফিরবেন—কারণ এটিই তার ঘর। কিছুদিন আগে গভীর রাতে গোপনে ক্যাম্প ন্যুতে প্রবেশ করে ইনস্টাগ্রামে লেখেন,
“হৃদয় দিয়ে অনুভব করি এমন এক জায়গায় ফিরেছিলাম। সেখানে গেলে হাজার গুণ সুখী লাগে। একদিন নিশ্চয়ই ফিরব—শুধু বিদায় জানাতে নয়।”



