দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
ঢাকাThursday , 12 June 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. কর্পোরেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. বিনোদন
  12. বিশেষ প্রতিবেদন
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আমের নতুন নতুন জাতের জন্ম হয় যেভাবে

বার্তা কক্ষ
June 12, 2025 8:56 am
Link Copied!

বাংলাদেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে নানা জাতের আম। সংখ্যাটি প্রায় ৮০০, যার অধিকাংশই স্থানীয় জাতের। কোনোটি মিষ্টি কিন্তু কোনো ঘ্রাণ নেই, কোনোটি আকারে ছোট কিন্তু সুঘ্রাণ আছে, আবার কোনোটির সুঘ্রাণ আছে কিন্তু আঁটি বড়, কোনোটির আঁশ অনেক বেশি কিন্তু আঁটি ছোট—এমন সব বৈচিত্র্যে ভরা। এক আমের মধ্যে একাধিক ভালো বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে নতুন জাত করার তাগিদ থেকে শুরু হয় আম নিয়ে গবেষণা।

গবেষণার সাফল্য হিসেবে বাংলাদেশের বাজারে এখন পাওয়া যায় নতুন নতুন জাতের আম। এমন নতুন জাতের সংখ্যা ১৮টি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আমের তিনটি হাইব্রিড জাতসহ মোট ১৮টি জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ১৪টি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গবেষণা থেকে, বাকি চারটি রাজশাহীসহ অন্যান্য ফল গবেষণাকেন্দ্র থেকে হয়েছে।

গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমের নতুন জাত উদ্ভাবন নিয়ে বাংলাদেশে কাজ শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। হাইব্রিডাইজেশন, ইন্ট্রোডাকশন, সিলেকশন ও মিউটেশন পদ্ধতিতে জাত উদ্ভাবনের কাজ চলে। এর মধ্যে হাইব্রিডাইজেশন পদ্ধতিতে চারটি, ইন্ট্রোডিউস পদ্ধতিতে দুটি ও সিলেকশন পদ্ধতিতে ১২টি নতুন জাতের আম পাওয়া গেছে। তবে মিউটেশন পদ্ধতিতে দেশে নতুন জাতের কোনো আম পাওয়া যায়নি।

আশ্বিনা আমের মা ফুলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার রঙিন জাতের একটি আমের বাবা ফুলের সংকরায়ণ ঘটানো হয়। এ থেকে যে আমের জাত পাওয়া যায়, সেটার নাম রাখা হয় বারি আম-৪। কৃত্রিম পরাগায়ণের মাধ্যমে দুটি ভিন্ন গাছের উন্নত বৈশিষ্ট্যকে একটিতে নিয়ে আসার এই পদ্ধিতে হলো হাইব্রিডাইজেশন। এভাবে পাওয়া আমটি আশ্বিনার চেয়ে ওজনে, মিষ্টতায়, ফলনে ও দেখতে অনেক ভালো হয়েছে।

এই পদ্ধতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুস্বাদু গোপালভোগের সঙ্গে বারি আম-১ এর সংকরায়ণে করা হয় বারি আম-১৮ জাতটি। এটি রসালো, সুঘ্রাণে ভরপুর। বারি আম-৩ ও পালমার জাতের সংকরায়ণে হয়েছে বারি আম-১৩। বারি আম-৩ ও বারি আম-৪–এর সংকরায়ণে পাওয়া গেছে বারি আম-১৭।

বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ জাতের আম আছে
বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ জাতের আম আছেছবি: প্রথম আলো

নতুন জাতের আমের ক্ষেত্রে আরেকটি পদ্ধতি হলো পরিচিতি বা ইন্ট্রোডাকশন। বিদেশি কোনো উন্নত জাতের গাছ নিয়ে এসে এ দেশে কয়েক বছর পর্যবেক্ষণ ও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করা হয়। আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারলে সেটি আমের জাত হিসেবে অবমুক্ত করা হয়। এভাবে ভারত থেকে একটি আম এ দেশে এসে বারি আম-৩, যা আম্রপালি হিসেবে পরিচিত। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসে একটি আম হয়েছে বারি আম-১৪।

আরেকটি পদ্ধতিতে আমের নতুন জাত করা হয়। এটি সিলেকশন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দেশি বা বিদেশি কোনো জাতের বিভিন্ন জেনোটাইপ বা জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়। নিবিড় পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জেনোটাইপ বা জার্মপ্লাজমকে বাছাই করা হয়। পরে সেটি নতুন জাত হিসেবে অবমুক্ত করা হয়। এভাবে পাওয়া জাত হলো বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৫, বারি আম-৬, বারি আম-৭, বারি আম-৮, বারি আম-৯, বারি আম-১০, বারি আম-১১, বারি আম-১২, বারি আম-১৫ ও বারি আম-১৬।

বাংলাদেশে চার পদ্ধতিতে আমের জাত উদ্ভাবনের কাজ চলে
বাংলাদেশে চার পদ্ধতিতে আমের জাত উদ্ভাবনের কাজ চলেছবি: প্রথম আলো

স্বাদ ও ফলন ভালো হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এসব আমের আবাদ বাড়ছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় স্থানীয় জাতের কিছু আমগাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় সেই আমের জাত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জমির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইউস্টিউট বারি আম নামে ১৮টি জাত অবমুক্ত করেছে। বাণিজ্যিক চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখেই এই জাতগুলো অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে চাষিরা সব জাতের সঙ্গে এখনো পরিচিত হননি। তাঁরা বারি-৩, বারি-৪ ও বারি-১৩ নিয়েই মাতামাতি করছেন। অন্যগুলোর সঙ্গে পরিচিত করার জন্য তাদের মধ্যে চারা বিতরণ করতে হবে। প্রচার করতে হবে। তাহলে চাষিরা লাভবান হবেন। দেশ উপকৃত হবে।