তিন দশক ধরে ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করছেন জাকির হোসেন। বয়স এখন ৬০। দুই সপ্তাহ ধরে তিনি রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তৃতীয় তলার পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডের ২ নম্বর বেডে বসে কথা বলছিলেন। নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর থেকে এসেছেন তিনি। সৌদি আরবে দীর্ঘদিন পেট্রোল পাম্পে কাজ করেছেন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে।
জাকির হোসেন জানান, তাঁর ডায়াবেটিস আগে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গলায় ব্যথা নিয়ে একজন ইএনটি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁর বাইপাস সার্জারি করতে হয়। অপারেশনের পর বাড়ি ফিরলেও কিছুদিনের মধ্যেই যে পা থেকে রগ নেওয়া হয়েছিল, সেই জায়গায় তীব্র ব্যথা শুরু হয়। পরে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁর বাম পায়ের পাঁচটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়। তিনি বলেন, “ডায়াবেটিসের জটিলতা সামাল দিতে দিতে আমার জমি বিক্রি করতে হয়েছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।”
জাকির হোসেন একা নন—ডায়াবেটিসের জটিলতার কারণে দেশের অসংখ্য মানুষ একই ধরনের সংকটে পড়ছেন। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, কম ঘুম, ব্যায়ামের অভাব, অতিরিক্ত মানসিক চাপ—এসব কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে। চিকিৎসা ব্যয়ও রোগীদের জন্য বড় বোঝা হয়ে উঠছে। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতন হলে অন্তত ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ১ কোটি ৩৮ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. আজাদ খান বলেন, কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, মানসিক চাপ, অনিয়মিত খাবার ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব—এসবই ডায়াবেটিস বৃদ্ধির প্রধান কারণ। তিনি জানান, স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ তৈরি করা এখন জরুরি।
বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বারডেম একাডেমির পরিচালক ডা. মো. ফারুক পাঠান বলেন, কর্মস্থলকে স্বাস্থ্যবান করা গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার ও মানসিক প্রশান্তি কর্মজীবী মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ ১৪ নভেম্বর, বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। তাঁর বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন, ডায়াবেটিস এমন এক রোগ, যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ দুটোই সম্ভব। সঠিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ডায়াবেটিস আক্রান্তরাও অন্য সবার মতো স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনযাপন করতে পারেন।
কর্মসূচি:
-
১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা: শাহবাগে প্ল্যাকার্ড হাতে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি। বারডেম কার পার্কিং থেকে টেনিস ক্লাব পর্যন্ত সড়কের এক পাশে অবস্থান।
-
১৫ নভেম্বর সকাল ৮টা–১১টা: বারডেম ও এনএইচএন-বিআইএইচএসের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয়।
-
১৫ নভেম্বর সকাল ১০টা: বারডেম অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা।
-
১৪ নভেম্বর সকাল ৯টা–বিকাল ৪টা: ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চতুর্থ তলায় হ্রাসকৃত মূল্যে হার্ট, নিউরো ও ভাসকুলার ক্যাম্প।
-
১৪–১৫ নভেম্বর সকাল ৮টা–রাত ৮টা: বারডেমে ৩২৬ নম্বর রুমে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি।

