মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কতটা বিপজ্জনক, এটা সেবন করলে আমাদের শরীরে কেমন প্রভাব পড়ে সে বিষয়ে অনেকের স্পষ্ট ধারণা নেই। এবার চিকিৎসকরা এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন, ভুক করে সেবনের পর কী করবেন তাও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অনেক সময় ভুল করে আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে ফেলি। তখন ঘাবড়ে যাই শরীরে কোনো বড় ক্ষতি হয়ে গেল না তো? কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি একেবারে হালকাভাবে নেয়া যাবে না।
এইচটি লাইফস্টাইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাধারণ চিকিৎসক ডা. রাহুল মেহতা বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানেই সঙ্গে সঙ্গে বিষে পরিণত হয়ে যায়, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বেশিরভাগ ওষুধ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকারিতা হারায়, তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে না। তবে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, হার্টের ওষুধ কিংবা ইনসুলিন, মেয়াদোত্তীর্ণ হলে দেহে কাঙ্ক্ষিত ফল নাও দিতে পারে, যা পরিস্থিতি জটিল করতে পারে।
তিনি জানান, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিছু ওষুধের রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে হালকা পেটের সমস্যা বা অ্যালার্জির মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু বড় বিপদের আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম। সমস্যা মূলত তখনই হয়, যখন ওষুধ কার্যকর না হয়ে রোগ লুকিয়ে রাখে বা উপশমে বিলম্ব ঘটায়।
যেসব ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ: স্টেরিস হেলথকেয়ারের সিইও জীবন কাসারা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ মানেই শুধু কার্যকারিতা কমে যাওয়া নয় কিছুক্ষেত্রে এটি অস্থির বা ক্ষতিকরও হতে পারে। বিশেষ করে তরল ওষুধ, ইনসুলিন বা অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত বিক্রিয়া করে। এ ধরনের ওষুধ মেয়াদ পার হলে শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, আর দীর্ঘমেয়াদি রোগে সঠিক চিকিৎসা না হলে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে পারে।

মেয়াদোত্তীর্ণ মানেই শুধু কার্যকারিতা কমে যাওয়া নয় কিছুক্ষেত্রে এটি অস্থির বা ক্ষতিকরও হতে পারে।
পুরোনো ওষুধ রেখে দেয়া অভ্যাস কতটা বিপজ্জনক: গ্রামগঞ্জে বা মধ্যবিত্ত পরিবারে ওষুধ জমিয়ে রাখার প্রবণতা বেশ সাধারণ। কিছু পেইনকিলার, পুরোনো অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা ফেইড হয়ে যাওয়া সিরাপ রাখা থাকে হঠাৎ দরকারে ব্যবহারের আশায়। এই প্রসঙ্গে আইকিউরের সিইও সুজয় সান্ত্রা বলেন, এই অভ্যাস মারাত্মক হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক মেয়াদ পার হওয়ার পরও খেলে সংক্রমণ পুরোপুরি সারে না, বরং জীবাণু আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতে মারাত্মক আকারে ফিরে আসতে পারে। এভাবেই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বাড়ে।
অন্যদিকে ডা. জীবন কাসারা বলেন, ওষুধ ফ্লাশ করে দেওয়া বা ডাস্টবিনে ফেলা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অনেক ফার্মেসিতে এখন ওষুধ ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই পথেই এগোনো সবচেয়ে নিরাপদ।
চিকিৎসকদের মতে, ভুল করে এক-আধটা ওষুধ খেয়ে ফেললে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। তবে নিয়মিতভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ গ্রহণ করলে সেটি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই ওষুধ ব্যবহারের আগে মেয়াদ দেখে নেয়া ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস