সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও চুরি, রিয়াপলোড বা ভুয়া অ্যাকাউন্টের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য থামাতে আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছে মেটা। নির্মাতাদের মৌলিক কাজকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্য নিয়ে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের জন্য উন্মোচন করা হয়েছে নতুন প্রজন্মের কনটেন্ট প্রোটেকশন টুল। রিল বা ভিডিও যেখান থেকেই আপলোড হোক, ফেসবুকে পোস্ট হওয়ার মুহূর্তেই এই টুল স্বয়ংক্রিয় স্ক্যান চালাবে; কোথাও মিল পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে মূল নির্মাতাকে নোটিফাই করবে।
মেটার ভাষ্য অনুযায়ী, কেউ ইনস্টাগ্রামে রিল পোস্ট করে সেটি ফেসবুকে শেয়ার করলে, কিংবা সরাসরি ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করলে—টুলটি ভিডিওটির কপি আছে কি না, বা ঘনিষ্ঠ মিল আছে কি না তা ক্রস-চেক করবে। অন্য কোনো ইউজারের অ্যাকাউন্টে একই ধরনের ভিডিও শনাক্ত হলে নোটিফিকেশন যাবে নির্মাতার কাছে। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন—ভিডিও ব্লক করবেন, পারফরম্যান্স দেখে অনলাইনে রাখবেন, নাকি অ্যাট্রিবিউশন যোগ করে মূল উৎসকে দৃশ্যমান করবেন। প্রয়োজনে সহযোগী বা অনুমোদিত পেজের জন্য আলাদা পারমিশন তালিকাও তৈরি করা যাবে।
মেটা জানায়, বর্তমানে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে বেশি ভিউ পায় রিল ভিডিও। জনপ্রিয়তা যত বেড়েছে, অননুমোদিত কপি, ভাইরাল কনটেন্ট চুরি বা কৃতিত্ব হারানোর ঘটনাও তত বেড়েছে। অনেক নির্মাতার সৃজনশীল পরিশ্রম অন্য ব্যবহারকারীর হাতে চলে যাচ্ছে—এই বাস্তবতা বদলাতে এবং ক্রিয়েটর ইকোসিস্টেমে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতেই নতুন টুল চালু হয়েছে। ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও স্প্যাম দমনে প্ল্যাটফর্মের যে ধারাবাহিক সংস্কার চলছে, এতে যুক্ত হলো আরও একটি সেফটি লেয়ার।
তবে কিছু সীমাবদ্ধতা এখনো রয়েছে। আপাতত টুলটি শুধুমাত্র ফেসবুকে থাকা ভিডিওর ওপর কাজ করবে। অর্থাৎ ইনস্টাগ্রামে রিল আপলোড করলেও যদি সেটি ফেসবুকে শেয়ার না করা হয়, স্বয়ংক্রিয় মিল যাচাই নাও হতে পারে। মোবাইল সংস্করণে সুবিধাটি চালু থাকলেও পরবর্তীতে ডেস্কটপে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও জানা গেছে, কোনো ভিডিওর মিল পাওয়া গেলে নির্মাতা ব্লক করার সিদ্ধান্ত নিলেও আপলোডকারী ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। নির্মাতার অধিকার সুরক্ষা আর সাধারণ ব্যবহারকারীর স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতেই মেটার এই নীতি। প্রতিষ্ঠানটির ধারণা—এই টুল নির্মাতাদের কনটেন্টকে আরও নিরাপদ রাখবে, আর দর্শকের কাছে আসল উৎসকে আরও স্পষ্ট করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, মেটার এই উদ্যোগ অনলাইন কনটেন্ট জগতে সৃজনশীলতা, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তার এক নতুন স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করবে।


