ক্যারিবীয় সাগরে আবারও প্রাণঘাতী অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। সন্দেহভাজন মাদকবাহী একটি নৌযানে টার্গেটেড স্ট্রাইক—এতেই নিহত হয়েছেন চারজন। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ঘটনার সময়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল—কারণ ২ সেপ্টেম্বরের দ্বৈত হামলার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনকে কেন্দ্র করে নতুন করে তদন্ত ও নজরদারি শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের হামলা সরাসরি যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়তে পারে।—সূত্র আল জাজিরা।
সেনাবাহিনীর সাউদার্ন কমান্ড সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক এই হামলার অনুমোদন দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তাদের দাবি—আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত নৌযানকে টার্গেট করা হয়েছে; যেখানে মাদক ছিল এবং নৌযানটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পরিচিত মাদকপাচার রুটে চলমান ছিল। নিহত চারজনকে তারা “নার্কো-টেরোরিস্ট” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
গত কয়েক মাসে এই ধরনের অভিযানে মার্কিন বাহিনী ইতোমধ্যে ৮০ জনের বেশি সন্দেহভাজন পাচারকারীকে হত্যা করেছে। তবে ২ সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় দফা হামলার তথ্য প্রকাশের পর কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—উভয় পক্ষেই প্রশ্ন উঠেছে, যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন হয়েছে কি না।
হোয়াইট হাউস বলছে—দ্বিতীয় হামলার নির্দেশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেননি; বরং নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল ফ্র্যাঙ্ক ‘মিচ’ ব্র্যাডলির নির্দেশেই তা চালানো হয়েছিল, এবং তাদের দাবি—এটি ছিল ‘যুদ্ধ আইনের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কারভাবে বলছেন—নিরস্ত্র অবস্থায় বেঁচে থাকা মানুষকে লক্ষ্য করে স্ট্রাইক চালানো যুদ্ধাপরাধ। মার্কিন বাহিনীর নিজস্ব নিয়মেও ডুবে যাওয়া নৌযানে পুনরায় হামলা নিষিদ্ধ।
বৃহস্পতিবার অ্যাডমিরাল ব্র্যাডলি কংগ্রেসের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন বলেন, “ব্র্যাডলি জানিয়েছেন—তাকে কখনো কাউকে ‘শেষ করে দেওয়ার’ নির্দেশ দেওয়া হয়নি।”
অন্যদিকে প্রতিনিধি অ্যাডাম স্মিথ (ডেমোক্র্যাট) দাবি করেন—মূল নির্দেশ ছিল, মাদক ধ্বংস এবং নৌকার ১১ জনকে হত্যা করা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ভিডিওতে দেখা যায়—প্রথম হামলার পর দুইজন উলঙ্গ অবস্থায় নৌকার ডুবে যাওয়া অংশ আঁকড়ে ধরে ছিলেন; ঠিক সেই মুহূর্তেই দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের হত্যা করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুরু থেকেই এসব অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের গন্ধ পাচ্ছিল। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে “নার্কো-টেরোরিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” হিসেবে উপস্থাপন করছে—কিন্তু কংগ্রেস থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা উপকূলে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। ট্রাম্প বারবার ইঙ্গিত দিচ্ছেন—“খুব শিগগিরই” স্থল হামলাও হতে পারে। পাল্টা অবস্থান নিয়ে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলছেন—এ সবই তার সরকারকে উৎখাতের প্রচেষ্টা।


