বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য মানুষ নানা রকম কর্মসূচি নেয়। কেউ শান্তিপূর্ণ পথ বেছে নেয়, আবার কেউ কঠোর প্রতিরোধেও যায়। সব কিছুর ভেতর সবচেয়ে নন-অ্যাগ্রেসিভ ও প্রতীকী কর্মপদ্ধতি হলো আমরণ অনশন, যার শেকড় ব্রিটিশবিরোধী রাজনীতির সময় থেকে আজ পর্যন্ত টিকে আছে। এই কর্মসূচিতে কারো ওপর সরাসরি ক্ষতি না এলেও অনশনকারী দ্রুতই অসুস্থ হতে শুরু করেন। সেই ঝুঁকি এড়াতেই কর্তৃপক্ষ অনেক সময় দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়।
অনশন শুরু হলেই মানুষের মাথায় প্রথম যে ধারণাটা আসে, তা হলো—
“ভাঙাবে তো ডাবের পানি দিয়ে।”
এটা আমাদের দেশের কালচার হিসেবেই জায়গা করে নিয়েছে। ফলের জুস দিয়েও অনশন ভাঙানোর দৃশ্য পাওয়া যায়, যদিও ডাবের পানি সবচেয়ে কমন।
দীর্ঘ সময় খাদ্য না খেলে শরীরে যা ঘটে:
পুষ্টিবিদদের মতে, ক্ষুধা লাগার পরও না খেলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে। রক্তচাপ কমে যেতে পারে। পেশি ক্ষয় হয়। দিন পার হতে হতে শরীরের এনার্জি লেভেল ড্রপ করে। মাথা ঘোরা, অস্বস্তি, ক্লান্তি এগুলো তখন নিয়মিত সঙ্গী হয়ে যায়।
ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে, মুডও নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে।
হজম প্রক্রিয়া তখন স্লো-মোশনে চলে— অ্যাসিড বাড়ে, এনজাইম কমে, অন্ত্রের ভেতরের মুভমেন্টও স্থবির হয়ে পড়ে।
লং-টার্মে এটি অঙ্গের ক্ষতিও করতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের হাইপো (কম সুগার) হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ডাবের পানির সুবিধা:
ডাবের পানি ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম আর ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ হওয়ায় ব্লাড প্রেসার ব্যালান্স করতে সাহায্য করে।
এটি শরীর থেকে টক্সিন ফ্লাশ আউট করে, গরমে শরীরকে হাইড্রেটেড ও ফ্রেশ রাখে।
এর ফাইবার পাচনতন্ত্রকে কার্যকর রাখে, হজমশক্তি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
এর ডাই-ইউরেটিক বৈশিষ্ট্য ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের ব্যাকটেরিয়া কমাতে সহায়তা করে এবং ইমিউনিটি বুস্ট করে।
এখন লজিক্যাল কনক্লুশন:
অনশনে শরীরের যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়, তা হলো হজমতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং অ্যাসিডিটির বৃদ্ধি।
অন্যদিকে ডাবের পানি প্রাকৃতিকভাবেই হজমশক্তি রিকভার করতে সাহায্য করে, শরীরকে হাইড্রেট করে এবং অতি সংবেদনশীল অবস্থায়ও পেটকে চাপ দেয় না।
সুতরাং উত্তর:
অনশনকারী দীর্ঘ সময় কিছু না খাওয়ার পর হঠাৎ ভারী খাবার দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। ডাবের পানি একটি জেন্টল, সেফ, দ্রুত হাইড্রেটিং, ডাইজেশন-ফ্রেন্ডলি সলিউশন।
এই কারণেই ডাবের পানি দিয়ে অনশন ভাঙানো আমাদের দেশে একটি প্র্যাকটিক্যাল, কালচারালি প্রতিষ্ঠিত এবং মেডিকেলি সেন্সিবল পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


