জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ’র যমজ ভাই এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন এবং রাতেই রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ সম্পন্ন করেন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পেছনের ভাবনা প্রকাশ করেন।
স্নিগ্ধ লেখেন, জুলাইয়ের পর নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের যে তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, সেই ঢেউয়ের একজন প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে আমি সামাজিক বিভিন্ন উদ্যোগে যুক্ত থেকেছি। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রচেষ্টা তরুণরা করছে, সেই ভিশন বাস্তবায়ন করতে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক দিন ধরেই আমার ছিল।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমি বা আমার ভাইরা কেউ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সক্রিয় ছিলাম না। মুগ্ধ একজন সাধারণ নাগরিক হয়েও দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। তাই আমার কাছে মুগ্ধসহ সকল শহীদ কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নয়—তারা জনগণের, তারা রাষ্ট্রের সম্পদ।
রাজনীতিতে আসা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় এবং এই নতুন সময়ের প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছি। নিজ সক্ষমতা, নিজ যোগ্যতা এবং নিজ পরিশ্রম দিয়েই সামনে এগোতে চাই।
তিনি আরও যোগ করেন, অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে জুলাইকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি বহুবার। এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক পরিসরে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব এগিয়ে নেওয়ার।
নিজের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মূল কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে আসার পিছনে কয়েকটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে—সর্বোচ্চ পরিসরে জুলাইকে প্রতিনিধিত্ব করা, জুলাইয়ের শহীদ, আহত যোদ্ধা, পরিবার এবং সর্বোপরি জুলাইয়ের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করা, রাজনীতিতে তরুণদের জায়গা তৈরি করা এবং বাংলাদেশপন্থি ও জুলাইপন্থি সব অংশীজনের মধ্যে একটি টেকসই ঐক্য গড়ে তোলা।
বিএনপিকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথমত বিএনপির দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ইতিহাস রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন ও রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার বহু জায়গায় আমি সরাসরি কাজ করার সুযোগ দেখছি।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হলে জুলাইয়ের ঐক্য আরও সুসংহত হবে। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান আমি তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করি। এটি আমার নিজ রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গেও সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দল ও তরুণদের মধ্যে একটি কার্যকর সেতুবন্ধন তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সবশেষে তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য সব রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশপন্থি, জুলাইপন্থি সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে একটি সুন্দর, সংস্কারমুখী, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়া। আমার রাজনীতির এই নতুন যাত্রায় সবার দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি আরও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন, এতদিন আমি যে সকল দায়িত্ব পালন করেছি তা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গেই করেছি। কারো কোনো অভিযোগ থাকলে শুধু অভিযোগ না করে প্রমাণসহ উপস্থাপন করবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। নতুন বাংলাদেশে এতটুকু শুদ্ধতা আমরা সবাই প্রত্যাশা করতে পারি।


