অক্টোবর ছিল ডেঙ্গু সংক্রমণের এক ভয়াবহ মাস। এ সময়ে রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ২২ হাজার মানুষ, আর প্রাণ হারিয়েছেন ৮০ জন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা—এই বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের শেষ ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৪৯ জন রোগী, যার মধ্যে ১২৮ জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত—এটি চলতি বছরের এক দিনে সর্বোচ্চ ভর্তি। বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ভর্তি রোগীদের ৮০ শতাংশই নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা। এছাড়াও ভাটারা, বাড্ডা ও ডেমরা এলাকার রোগীর সংখ্যাও কম নয়। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, তাদের এলাকায় মশা নিধনে ওষুধ স্প্রে না করায় উপদ্রব বেড়ে গেছে, আর তাতেই আক্রান্তের হারও বাড়ছে।
গত বছর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ৬১ হাজারে, আর এ বছর তা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। আগস্টের তুলনায় অক্টোবরে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গুর ভাইরাসের চারটি স্ট্রেন থাকায় একজন মানুষ চারবার পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারেন, আর প্রতিবারেই জটিলতা বেড়ে যায়। অনেক সময় জ্বর কমে যাওয়ার পরও শরীরে গুরুতর অবস্থা তৈরি হয়, যা রোগীরা বুঝতে পারেন না।
চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়লেও মৃত্যুর মিছিল থামেনি। এ বছর এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৭৮ জন, যার মধ্যে গত তিন মাসেই প্রায় দুই শ’ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, “রোগীরা যেন দ্রুত পরীক্ষা করাতে পারেন, সে জন্য ডেঙ্গু টেস্ট সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়েছে। মাত্র ৫০ টাকার কারণে যেন কেউ দেরি না করে—এটাই লক্ষ্য।”
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এবার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধনে উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, “এখনও এডিস মশা ডেঙ্গু ছড়ানোর উপযোগী অবস্থায় আছে। সাধারণত নভেম্বরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে, কিন্তু এবার ডিসেম্বর পর্যন্তও প্রকোপ থাকতে পারে।”
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন প্রায় তিন হাজার।

