জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত না হয়েও ১০৪ জন ব্যক্তি ‘জুলাই-যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আন্দোলনে যুক্ত নেতারা বলছেন, এরা ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা। সরকারও তাদের চিহ্নিত করে নামের গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের আট বিভাগে এসব ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশের তথ্য মিলেছে। এমন ২৩ জনের ক্ষেত্রে একটি গেজেট বহাল রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কিছু ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আন্দোলনে অংশ নেননি। তারা প্রতারণার মাধ্যমে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। জেলা কমিটিগুলোর যাচাইয়ে এসব অনিয়ম ধরা পড়েছে এবং সংশ্লিষ্ট তালিকা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া এবং ১ জনের নামে দুবার গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। সিলেটে ২৬ জন ভুয়া ও ১ জনের নাম দুবার, চট্টগ্রামে ৩৪ জন ভুয়া ও ৪ জনের নাম দুবার, খুলনায় ৫ জন ভুয়া ও ৪ জনের নাম দুবার, রংপুরে ২ জন, ঢাকায় ৭ জন ভুয়া ও ৭ জনের নাম দুবার, রাজশাহীতে ৯ জন ভুয়া ও ৪ জনের নাম দুবার, আর বরিশালে ২ জনের নাম দুবার গেজেট হয়েছে।
সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের মধ্যে ২৩ জনের নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ হয়েছে, আর বাকি ১০৪ জন প্রকৃত যোদ্ধা না হয়েও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ফলে সরকার তাদের নাম বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন— সৈয়দ তরিকুল ইসলাম (গেজেট ৮০), মোহাম্মদ নুরুল আমিন (৮৮), তানভীর আহমেদ (১২১), আছিয়া খাতুন (১২৩), রুহুল আমিন (১২৭), আমি হাসান রুপম (১২৯), আকিব তালুকদার (১৪৬), সুজন মিয়া (১৫৫), ইমন শাহারিয়া (১৬৫), আশরাফুল ইসলাম জাসাম (১৭২), মুশফিকুর রহমান (১৯৭), মো. সজিব (১৯৮), সোহাগ মিয়া (১৯৯), রুবেল মিয়া (৩৬২), জসিম উদ্দিন (৩৬৩), রাব্বি হাসান শ্রীনি (৫৬৫), আজহারুল ইসলামিক (৫৬৬), আবু ফরিদ আহামেদ (৫৬৭), আফরিনা জান্নাত (৫৭০) ও মাজহারুল ইসলাম (৬৪৮)।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া এবং ৭ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে— রাসেল (৬৭০), খন্দকার রাজ (১০৬৩), রাফিউল নাঈম (১১৬১), রাশেদুল ইসলাম অনিক (১১৬৩), আব্দুল্লাহ আল রাহাত (১১৬৬), মঞ্জমুল আলম জিসান (১৯৩২), সাইফুল ইসলাম শুভ (২৬৮২), রিয়াজুল হাসান (২৮৩৮), বেলায়াত হোসেন শাহীন (২৮৩৯), মুজবর মৃধা (৩৯৬৪), জিহাদ (৩৪১৩), রফিকুল সরদার (৭৩৩), মাসুদুর রহমান (৬৪৫), মোছা রুমি (৩৪৩১) ও রিয়াজ শরীফ (১৩৮২)।
চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫ জনের নাম বাতিলের তালিকায় এসেছে। এদের মধ্যে আছেন— মো. শাগর (৩২৮), আবদুল্লাহ আল নোমান (৪৬৯), নাইম উদ্দিন শাঈদ (৪৯২), শরিফুল ইসলাম (৫১৫), শাহাদাত ইকবাজ তাহনি (৫২১), তাহমিনা ইকরার তারকি (৫২২), মাহাবী তাজওয়ার (৫৩৪), জসিম উদ্দিন (৫৪২), আতিকুল ইসলাম (৫৫২), ইয়াছিন (৫৬০), আরফাতুল ইসলাম (৫৯৫), ফরহাদ আলম (৬০১), এমরান (৬০৩), মুনজামিরুল হক মামুর (৬১৬), পঠন চন্দ্র নাথ (৬২২), মিশকাত-আলম রিয়াদ (৬৭৫), মাহাম্মদ সাগর (৭৬৮), নুরুল্লাহ (৭৮৯), সোহাম্মদ রাফি (৭৯৯), ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস (৮০২), ইছনিয়া আকতার (৮২৪), মাঈনুদ্দীন (৮২৫), সাইমন (৯৭৩), আরিফ (১৯৭৬), রাসেল (১৯৮৬), রমজান আলী (৯৮৭) ও রিফাত বিন আল (১৯৯৯)।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে অংশ না নিয়েও অনেকে জুলাই-যোদ্ধা পরিচয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করায় সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। পরে ভুয়া প্রমাণিত হলে তাদের তালিকা বাতিল ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে ১,১১৮ জন, গ শ্রেণিতে ১২,০৮০ জন আহত এবং নিহত হয়েছেন ৮৪৪ জন। এর মধ্যে ৮ জনের গেজেট ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, যাচাই-বাছাই শেষে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে, তাদের গেজেট বাতিলের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে। আগে বাতিল প্রক্রিয়া শেষ করা হবে, এরপর অর্থ ফেরতসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

