
সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর এলাকায় বিরাজ করছে উত্তেজনাপূর্ণ নীরবতা। সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে এবং এলাকাজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার পর থুথু ফেলা নিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এতে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আহত হন অন্তত পঞ্চাশাধিক শিক্ষার্থী।
সোমবার সকাল পর্যন্ত সিটি ইউনিভার্সিটির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ভবনের ভেতর পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ভাঙা আসবাব, কাঁচের টুকরো ও নথিপত্র। পুড়ে যাওয়া বাস, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলগুলো থেকে তখনও ধোঁয়া উঠছিল। একাডেমিক ভবনের কক্ষগুলোতেও দেখা গেছে ভাঙচুরের চিহ্ন—চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, প্রিন্টার ও এসি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাটি শুরু হয় ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ নামে একটি ছাত্রবাসের সামনে। সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর থুথু অসাবধানতাবশত ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে পড়লে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালায়। খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে অন্তত তিনটি বাস, পাঁচটি মাইক্রোবাস ও একাধিক মোটরসাইকেল পুড়ে যায়।
সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শাহাদাত বলেন, “অতি তুচ্ছ ঘটনা থেকেই এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের ক্যাম্পাসে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। ল্যাবের যন্ত্রপাতি, গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে।”

এক নারী শিক্ষার্থী জানান, “রাতে মেয়েদের হলে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে, গেট ভাঙার চেষ্টা চলেছে। আমরা রুম থেকে বের হতে ভয় পেয়েছিলাম।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আরিফুজ্জামান অভিযোগ করেন, “রাতভর পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। দুইটি ছাত্রী হলসহ পুরো ক্যাম্পাস ছিল আতঙ্কে।”
প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, “এটি সাধারণ সংঘর্ষ নয়, বরং পরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।”
অন্যদিকে, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা সহিংসতায় জড়াক। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আমাদের সন্তান।”
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. আরাফাতুল ইসলাম জানান, “রাত থেকেই পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকা এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.