জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের গণপরিষদ, সংবিধান সংস্কার সভা, গণভোট ও অধ্যাদেশের জারির মতো ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে আটটি রাজনৈতিক দল। একইসঙ্গে সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের পর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কমিশনের সভাপতি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপিল বিভাগের মতামত নিতে পারেন বলেও পরামর্শ দিয়েছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল।
রোববার (৩১ আগস্ট) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এমন প্রস্তাব দেয় রাজনৈতিক দলগুলো। বৈঠক অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সোমবার একই সময়ে আরও ১৭টি দলের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরি করতে চায় কমিশন। এজন্য আগামী দুই-তিনদের মধ্যে চূড়ান্ত জুলাই সনদ পাঠানো হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। যেখানে বাস্তবায়নের রূপরেখা দেওয়া হবে। যেটা দলগুলোকে মানার জন্য অনুরোধ করবে কমিশন।
এর আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে একাধিকবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে কমিশন। এরপর রোববার আটটি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলো কমিশন।
বাস্তবায়ন সম্পর্কে দলগুলোর মতামত জানতে কমিশন বৈঠক করছে বলে জানিয়েছেন সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সনদের চূড়ান্ত কপি তাদের দেওয়া হবে, সেটি তৈরি করতে দলগুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে।
বাস্তবায়নের জন্য দলগুলো বিভিন্ন মতামত দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি দলের প্রতিনিধি বলেন, কেউ বলেছেন সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচনের কথা, আবার কোনো রাজনৈতিক দল প্রস্তাব দিয়েছে গণভোটের। কেউ কেউ সাধারণ নির্বাচনের কথাও বলেছেন। তবে কমিশন কোনো কথা বলেনি। তারা সোমবার আরও কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে তারা সনদ তৈরির কাজ শেষ করতে চান বলে দলগুলোকে জানিয়েছেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা বলেন, কমিশন আমাদের বলেছে তারা মেয়াদ বাড়াতে চান না।
এই নেতা আরও বলেন, কমিশন আমাদের বলেছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দলগুলোকে জানাবে কমিশন। সেটা মেনে নেওয়ার জন্য দলগুলোকে অনুরোধ করবেন। বৈঠকে আমাদের কেউ কেউ গণভোট, গণপরিষদ, সংবিধান সংস্কার সভা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে, অধ্যাদেশ, রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। আমরা গণভোট ও গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলেছি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ কমিশনের সঙ্গে আমাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। তারা জানিয়েছেন আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবেন।
তিনি বলেন, সনদ বাস্তবায়নের আইনি বিষয়ে আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
এদিকে, বৈঠক দলগুলোকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
বৈঠক অংশ নেওয়ার আরেকটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করার মাধ্যমে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চেয়েছি। যার মাধ্যমে আইনি ভিত্তি পাওয়া যাবে। এটার জন্য সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে পারে সরকার। সেই অনুযায়ী নির্বাচন ও অন্যান্য কাজ করার কথা বলেছি।
বৈঠক অংশ নেওয়ার আরেকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর ভিত্তি করে সনদের অঙ্গীকার নামায় কিছু পরিবর্তন আসবে। আর বাস্তবায়নের আলাদা একটা রূপরেখা হবে।
এই নেতা আরও বলেন, সনদ বাস্তবায়নে কেউ কেউ গণভোটের কথা বলেছেন। কিন্তু এই ভোটের পেছনে শক্ত যুক্তি দেখাতে পারেনি। কারণ গণভোটের আয়োজন করা হবে পজিটিভ ফলাফলের জন্য কিন্তু সেখানে যদি নেগেটিভ ফলাফল আসে তখন তো আম-ছালা দুটিই যাবে। তাই এক্ষেত্রে একটি প্রস্তাব হলো– সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের পর ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে ড. ইউনূস আপিল বিভাগের কাছ থেকে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি মতামত নিতে পারেন। এক্ষেত্রে পরবর্তী সংসদ সেই মতামত মানতে বাধ্য থাকবে, বিষয়টি এমন নয়।
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২০ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। সেই আলোচনা থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে কমিশন গত ১৬ আগস্ট জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর একটি খসড়া উপস্থাপন করে। খসড়াতে রয়েছে একটি ভূমিকা, বেশিরভাগ দলের সমর্থিত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব ও একটি অঙ্গীকারনামা।
২৩ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ ২৯টি দল খসড়া নিয়ে মতামত দিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভূমিকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও অঙ্গীকারনামার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমালোচনা করেছেন।
এ ছাড়া জামায়াত ও এনসিপিসহ কয়েকটি দল সনদের টেকসই বাস্তবায়নের জন্য একটি আইনি কাঠামোর ওপর জোর দাবি জানিয়েছে।
খসড়াটি চূড়ান্ত করার অংশ হিসেবে কমিশন গত ১০ আগস্ট থেকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ আইনবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে।
বিশেষজ্ঞরা সনদ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ১৩তম জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজন বা একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করা।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল ৩টা থেকে ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হবে।
ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের মহাসচিব মোমিনুল আমিন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও বাসদ মার্কসবাদী দলের সমন্বয়ক মাসুদ রানা ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ আরও বলেন, কমিশনের সদস্যরা দলগুলোর মতামত বিশ্লেষণ ও খসড়ার ভাষা পরিমার্জন করার জন্য একাধিক বৈঠক করেছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.