কর্মকর্তারা বলেন, এই দুটি এক্সপ্রেসওয়েকে সংযুক্ত করা হলে তা চূড়ান্তভাবে নির্মাণাধীন ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ তিনটি প্রধান উড়ালসড়ককে যুক্ত করবে। এতে উত্তরাঞ্চলের—রাজশাহী, রংপুর বা ময়মনসিংহ—যানবাহনগুলো কেন্দ্রীয় ঢাকার যানজট না বাড়িয়েই সরাসরি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বা পশ্চিমাঞ্চলে—চট্টগ্রাম বা খুলনা—যেতে পারবে।
কর্মকর্তারা জানান, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সম্প্রতি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে এক্সপ্রেসওয়ে দুটি সংযুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফ টিবিএসকে জানান, ইতিমধ্যে এই সংযোগের বিষয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই সমীক্ষার মাধ্যমে পরিকল্পনাটি বাস্তবসম্মত কি না, তা নির্ধারণ করা হবে। এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। সমীক্ষায় সংযোগটির আনুমানিক ব্যয়, নকশা ও সঠিক রুট—এটি ওভারপাস হবে নাকি সড়ক সংযোগ—তার রূপরেখা দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস জানান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মাধ্যমে এই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।
এছাড়াও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বর্তমান বিনিয়োগকারীরা বিমানবন্দর থেকে যান চলাচল সহজ করার জন্য মহাখালীতে একটি নতুন র্যাম্প নির্মাণের জন্য আরেকটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করবে।
পুরো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েটি বিমানবন্দর পয়েন্টে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে—ওই প্রকল্প আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এক্সপ্রেসওয়ে ও মহাসড়কগুলো সংযুক্ত হলে যাত্রীরা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। এতে সময় ও জ্বালানি দুটোই সাশ্রয় হবে। এতে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনও ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে।
এছাড়াও দূরপাল্লার যাত্রী ও ট্রাক সরাসরি এই রুট ব্যবহার করায় তিনটি এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় থেকে আয়ও বাড়বে।
বিলম্বিত ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে গতি ফিরছে
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলে ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে বিলম্বিত হলেও এখন বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় পুরোদমে কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
চায়না এক্সিম ব্যাংকসহ অন্য ঋণদাতারা অর্থছাড় বন্ধ করে দেওয়ায় নির্মাণকাজ থেমে গিয়েছিল। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এখন সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছে; চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে পরবর্তী কিস্তি ছাড় হলেই পুরোদমে ফের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে আইনি ও আর্থিক জটিলতার কারণে এর আগে আইসিবিসি ও চায়না এক্সিম ব্যাংকসহ ঋণদাতারা অর্থছাড় বন্ধ করে দিয়েছিল।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১৩তম কিস্তি আটকে আছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সমস্যাগুলো সমাধান করা হচ্ছে; কিস্তিটি শিগগিরই ছাড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির শেয়ারহোল্ডাররা হলো ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (৫১ শতাংশ), চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (৩৪ শতাংশ) ও সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড (১৫ শতাংশ)।
চায়না এক্সিম ব্যাংক ৪৬১ মিলিয়ন ডলার ও আইসিবিসি ৪০০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ মোট ৮৬১ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ১২তম চক্র পর্যন্ত ৪৬৭.৩২ মিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়েছে।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা (২৭ শতাংশ) বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে।
কর্মকর্তারা শুরু থেকেই বিলম্বের জন্য বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেন, যার মধ্যে রয়েছে আইনি ও আর্থিক সমস্যা, অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা এবং চূড়ান্ত নকশা অনুমোদনে বিলম্ব। ভূমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত সমস্যার—বিশেষত বাংলাদেশ রেলওয়ে, পান্থকুঞ্জ পার্ক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্থ এলাকায়—কারণে কিছু অংশের নকশা নতুন করে করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, তৃতীয় ধাপে—মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত—এখনও পর্যন্ত মাত্র ১২ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।