দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
ঢাকাSaturday , 9 August 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্যপ্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ প্রতিবেদন
  11. রাজনীতি
  12. লাইফস্টাইল
  13. শিক্ষা
  14. সারাদেশ
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যা – স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি

বার্তা কক্ষ
August 9, 2025 1:15 pm
Link Copied!

গাজীপুরে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে যেমন নিষ্ঠুরতায় দেশীয় অস্ত্র দিয়া কোপাইয়া হত্যা করা হইয়াছে, উহা পুনরায় প্রমাণ করিল– এই সময়ে জনগণকে সংবাদ জানাইবার আপাত নিরীহ কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের বরাত দিয়া স্থানীয় পুলিশ জানাইয়াছে, গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশীয় অস্ত্র লইয়া এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পশ্চাৎ দিক হইতে সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করিতেছিলেন তুহিন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হইতেছে, এই দৃশ্য ধারণ করায় উক্ত সন্ত্রাসীরা তুহিনকে কোপাইয়া হত্যা করে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক হত্যা করিবার এই ঘটনাকে অবশ্যই স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এক গুরুতর হুমকি হিসাবে দেখিবার অবকাশ রহিয়াছে। অথচ এক বৎসর পূর্বে দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত তাঁহার প্রথম ভাষণে স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। নিঃসন্দেহে, উক্ত সাংবাদিক হত্যার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সহিত সম্পর্কিত। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতকরণের দায়িত্বও তো সরকারের। তদুপরি, এই প্রশ্নও উত্থাপন করিলে বাহুল্য হইবে না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতটুকু অবনতি ঘটিলে তাহা সংবাদকর্মীদেরও রেহাই দেয় না? কিছুদিন পূর্বে প্রকাশিত বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, গত জানুয়ারি হইতে জুন অবধি ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৬টি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালীন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়াছে। উপরন্তু একই সময়ে উক্ত ৬৬টিসহ মোট ১৯৬টি ঘটনা ঘটিয়াছে, যথায় রহিয়াছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী দ্বারা সংবাদকর্মীদের হুমকি প্রদান, খবর প্রকাশের কারণে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ইত্যাদি ঘটনা। স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করিতে অঙ্গীকারবদ্ধ একটা সরকারের আমলে সংবাদকর্মী হয়রানি ও নির্যাতনের এত ঘটনা ঘটিল কী প্রকারে? এই কথা কি বলা যায় না, যদি উক্ত হামলা-মামলার ভুক্তভোগীদের সুরক্ষায় সরকার আন্তরিক হইত, তাহা হইলে সমগ্র দেশে সর্বমহলে অন্তত একটা বার্তা যাইত– স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কোনো কিছুই সরকার বরদাশত করিবে না।

স্বীকার্য, বিগত ৫৪ বৎসরে এই দেশে কোনোদিনই সাংবাদিকতা ঝুঁকিহীন ছিল না এবং বিগত সরকারের সময় পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটিয়াছিল। দলনিরপেক্ষ সাংবাদিকদের তখন একদিকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার হুমকি-ধমকির মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করিতে হইয়াছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং নানা প্রকার দুর্বৃত্তদের হামলা-মামলা ছিল প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। ইহাও সত্য, দীর্ঘদিন ধরিয়া বিরাজমান এই সমস্যার নিরসন রজনীকালেই করা যাইবে না। কিন্তু প্রত্যাশা ছিল, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তন স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষাবলম্বনকারীদের অন্তত একটু আলোর রেখা দেখাইবে। দুর্ভাগ্যজনক, বাস্তবতা ভিন্ন কিছু বলিতেছে। শুধু উহাই নহে, নবরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর আক্রমণ হইতেছে। গত বৎসর একটি বিশেষ মহল যখন বিভিন্ন সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে, এমনকি প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যালয়ের সম্মুখে দাঁড়াইয়া, কয়েক দিন যাবৎ আক্রমণাত্মক কর্মসূচি ও প্রচার-প্রচারণা চালাইয়াছিল, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এক প্রকার সুরক্ষা দিলেও উক্ত বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয় নাই। ঢালাওভাবে সম্পাদকসহ বহু সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করিবার ঘটনাও এই প্রসঙ্গে উত্থাপন করা যায়।

আমরা জানি, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় স্থানীয় বাসন থানায় শুক্রবার মামলা হইয়াছে। কোনো কোনো আসামি গ্রেপ্তারও হইয়াছে। আমাদের প্রত্যাশা, বিগত সময়ে মানিক সাহাসহ বিভিন্ন সাংবাদিক হত্যার বিচার উপেক্ষিত হইবার পুনরাবৃত্তি আলোচ্য ঘটনায় ঘটিবে না। স্বল্প সময়ের মধ্যে যথাযথ তদন্তপূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হইবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা চলিতেছে, তাহার অন্যতম সহায়ক শক্তি স্বাধীন সাংবাদিকতা। তাই রাজনৈতিক দলগুলিকেও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষায় অগ্রসর হইতে হইবে।