জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে পাঠ করা হয়েছে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।
ঘোষণাপত্রে ১-১৬ নম্বর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের ওপর ভিত্তি করে ১৬টি প্রধান ‘যেহেতু’ যুক্তির মাধ্যমে বর্তমান ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রে প্রথমেই বলা হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের জনগণ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এরপর বারবার জনগণকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের স্বপ্ন দেখানো হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের কাঠামোগত দুর্বলতা, পরবর্তী একদলীয় বাকশাল শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট হয়েছে বলেও দলিলটিতে উল্লেখ করা হয়।
ঘোষণাপত্রে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালের ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব’ থেকে শুরু করে ১৯৯০ সালের সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বলা হয়, এসব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও তা টিকেনি। বরং ১/১১ এর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র আধিপত্যের পথ উন্মুক্ত হয়, যার ফলশ্রুতিতে গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে একটি ফ্যাসিবাদী, একদলীয় এবং জনগণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছে বলে ঘোষণাপত্রে অভিযোগ করা হয়।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুঃশাসন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের অভিযোগ ব্যাপকভাবে উঠেছে। পাশাপাশি উন্নয়নের নামে দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ব্যাংক লুটের মধ্য দিয়ে অর্থনীতি ও পরিবেশকেও বিপর্যস্ত করা হয়েছে।
এ দলিলে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ভিন্নমতের নেতা-কর্মী ও ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়ন, বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা এবং সরকারি চাকরিতে দলীয় নিয়োগের কারণে সমাজে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ঘোষণাপত্রের শেষ অংশে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর নির্মম দমন-পীড়নের ফলে সারা দেশে দল-মত-নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার ঐক্য গড়ে ওঠে এবং সেই গণবিক্ষোভ একপর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। সেই অভ্যুত্থানের ভিত্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রস্তুত করা হয়েছে বলে দলিলটিতে উল্লেখ করা হয়।
ঘোষণাপত্র পাঠ শেষে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নেতাদের মধ্যে ছিলেন— বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এবং সংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি।