জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় তা ঘোষণা করা হবে। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বার্তায় এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’
রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আগের খসড়া ঘোষণাপত্রে ২৭ দফা ছিল। সর্বশেষ খসড়ায় একটি কমে ২৬ হয়েছে। ঘোষণাপত্রে যুক্ত হয়েছে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে সমকাল যোগাযোগ করলেও আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেননি।
সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। এতে পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডও যুক্ত হয়েছে।
সর্বশেষ খসড়ায় যোগ করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর ওপর ছাত্রলীগ ‘পাশবিক নির্যাতন’ চালায়। ফলে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা ঘোষণা করে, যা পরবর্তী সময়ে এক দফায় রূপান্তরিত হয়। এ দফায় আগের মতোই বলা হয়েছে, আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন করেন।
সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভা, স্পিকার ও এমপিরা পালিয়ে যান। আগের খসড়ায় বলা হয়েছিল, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। তবে সর্বশেষ খসড়ায় বলা হয়েছে, জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট।
আগের খসড়ায় ছিল, সংবিধান সংস্কারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে জনগণ। সংশোধিত খসড়ায় রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কারের অভিপ্রায়ের কথা বলা হয়েছে। নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আয়োজিত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আইনের শাসন, মানবাধিকার, দুর্নীতি এবং শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণার উল্লেখ এবং তপশিলে যুক্ত করার কথা সর্বশেষ খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে তিনবার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় মতামত দিয়েছে বিএনপি। সংবিধানের প্রস্তাবনায় ঘোষণাপত্র যুক্ত করতে রাজি নয় দলটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, ‘ঘোষণাপত্র আইন নয়, একটি লিটারেচার। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রই প্রস্তাবনায় রাখা হয়নি। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর শেখ হাসিনা সরকার ২০১১ সালে সপ্তম তপশিলে যোগ করে, যা আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সমানও নয়। তাই সার্বিক বিবেচনায় জুলাই অভ্যুত্থান এবং ঘোষণাপত্রের সারমর্ম সংবিধানের চতুর্থ তপশিল তথা ক্রান্তিকালীন বিধানে যোগ করা হবে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকবে না।’
৫ আগস্ট সবাইকে নিয়ে সরকার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এতে বিএনপি যোগ দেবে কিনা প্রশ্নে– সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি যেসব মতামত দিয়েছে, নিশ্চয় তা ঘোষণাপত্রে থাকবে।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে জানান, খসড়ায় তারা মতামত দিয়েছেন। ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই-সংগ্রাম, জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোকে নিপীড়নের স্বীকৃতি দিতে বলেছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন জুলাই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। ঘোষণাপত্র সংবিধানের প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
গতকাল সকালে তথ্য মন্ত্রণালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রূপকল্প হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার দালিলিক প্রমাণও। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরির কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগে এ সনদ স্বাক্ষরিত হবে।’
এ ছাড়া গতকাল রাতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র আসছে।’
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.