ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে আরও বেশ করেয়েকটি দেশের শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন।
শুক্রবার শুল্ক নিয়ে হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় নতুন এই শুল্কহারের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মাধ্যমে কয়েক ডজন দেশ ও বিদেশি অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই আদেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ, তাইওয়ানের ওপর ২০ শতাংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং নতুন এই শুল্কহারের কথা জানিয়ে এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছে, অনেক বিষয় জড়িত থাকায় শুল্ক আলোচনার প্রক্রিয়াটি ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। শুল্ক ছাড় পাওয়ার বিষয়টি শুধু মার্কিন রপ্তানির ওপর শুল্ক কমানোর সঙ্গেই যুক্ত ছিল না, বরং অশুল্ক বাধা, বাণিজ্য ঘাটতি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত মার্কিন উদ্বেগ সমাধানে একটি দেশের সদিচ্ছার ওপরেও নির্ভর করছিল।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ২০ শুল্ক পেয়েছে—যা তৈরি পোশাক খাতের প্রধান প্রতিযোগী দেশ শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার প্রায় সমান। এই দেশগুলো ১৯ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে শুল্ক পেয়েছে। ফলে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের তুলনামূলক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিত চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারায় ভারতের ওপর ২৫ শতানংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
শুল্ক আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা সতর্কতার সাথে আলোচনা করেছি, যাতে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আমাদের পোশাক শিল্পকে রক্ষা করা ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তবে এর পাশাপাশি আমরা মার্কিন কৃষিপণ্য কেনার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলোর সঙ্গে আমাদের সদ্ভাব বাড়াবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা সফলভাবে একটি সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে পেরেছি। এটি আমাদের পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য সুখবর। এর মাধ্যমে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগ তৈরি করেছি।’
গত ২ এপ্রিল বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির কথা বলে বিভিন্ন দেশের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। সে সম বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
পরে দেশগুলোকে শুল্ক নিয়ে আলোচনার সুযোগ দিতে ৯ এপ্রিল ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ৯ জুলাই সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়।
৯ জুলাইয়ের পর শুল্কহার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশগুলোকে সময় বেঁধে দেয় ওয়াশিংটন।
ওই সময়সীমা শেষে আজ (১ আগস্ট) থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। নতুন ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে বর্তমানের গড় ১৫ শতাংশ মিলিয়ে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে হবে।
শুল্ক আলোচনার জন্য বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদল একখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে আচছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলে আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।