দেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর নাদির নিবরাস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ভ্রমণের ভিডিও দেখেননি, এমন বাঙালি নেটিজেন খুব কমই মিলবে। অধিকাংশ মানুষই তাকে চেনেন ‘নাদির অন দ্য গো’ নামে।
সম্প্রতি তিনি তার চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি তুলে ধরেন গত এক বছরে তার ভিসার জন্য আবেদন করা দেশ, সেখানে বাংলাদেশিদের নিয়ে ধারণা ও ভিসা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে নানা অভিজ্ঞতার কথা।
রোববার (২৭ জুলাই) ওই ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। এতে নাদির জানান, গত এক বছরে ১৭টি দেশে তিনি ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, যার মধ্যে ৭টি দেশই ভিসা দেয়নি। এমনকি যেসব দেশ আগেও তাকে ভিসা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৩টি দেশ এবার তাকে রিজেক্ট করেছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) এক ফেসবুক পোস্টে নাদির বলেন, গতকাল আমি ইউটিউবে একটা নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছি। যেখানে বলেছি, গত এক বছরে বিভিন্ন দেশের ট্যুরিস্ট ভিসা নিতে গিয়ে আমার কী কী সমস্যা হয়েছে। এই সময়ে আমি ১৭টি দেশের ভিসার জন্য আবেদন করেছি। এর মধ্যে ৭টি দেশ ভিসা দেয়নি। মজার ব্যাপার হলো, যেসব দেশ আগেও আমাকে ভিসা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৩টি দেশ এবার আমাকে রিজেক্ট করেছে। এটা দেখায় যে, অবস্থাটা আগের চেয়ে খারাপ হচ্ছে।
তিনি বলেন, পুরো ভিডিওতে আমি বলেছি কেন আমাদের পাসপোর্ট দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, আর কেন ভিসা পাওয়া এত কঠিন হয়ে পড়ছে।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিওতে নাদির বলেন, ২০২৪ সালে দুবাইয়ের ভিসার আবেদন করেছিলাম, ১৭ হাজার টাকার মতো লেগেছিল। তারা ভিসা দিয়েছিল কোনো সমস্যা ছাড়াই। এরপর ইস্তাম্বুলের ই-ভিসার আবেদন করি, খরচ পড়ে ৬০ মার্কিন ডলারের মতো। যুক্তরাষ্ট্র ও শেনজেনসহ কয়েকটি ভিসা থাকলে এ দেশের ভিসা পাওয়া সম্ভব। একই উপায়ে কাতারের ই-ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা হয় না। খরচ পড়ে ২৭ ডলারের মতো। বাহারাইনেরও ই-ভিসার অপশন আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও শেনজেন ভিসা থাকলে সেখানকার ভিসাও পাওয়া সম্ভব। তবে আমাকে রিজেক্ট করা হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৭-১৮ সালে অ্যারাইভাল ভিসা ছিল। এখন সব দেশের মানুষ ভিসা পেলেও বাংলাদেশ ও কয়েকটি দেশ যেগুলোতে যুদ্ধ চলছে, সেগুলোর নাগরিকরা ভিসা পাচ্ছেন না।
ইতালির বিষয়ে নাদির বলেন, ইতালির অবস্থা খুবই খারাপ। অবৈধভাবে অনেক বাংলাদেশি সেখানে যায় এবং বসবাস করে। এ কারণে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা খুবই কড়াকড়ি আরোপ করেছে। গত বছর থেকে দেশটি বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না।
জনপ্রিয় এ ট্রাভেল ব্লগার বলেন, শ্রীলঙ্কার ভিসা পাওয়া খুবই সহজ, পেয়েছিলামও। কম্বোডিয়ার ই-ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম, ৩৬ ডলার খরচ পড়ে। তবে এখন আর দিচ্ছে না। ভিয়েতনামের ই-ভিসা পাওয়া যেত এক বছর আগেও। তারাও এখন দিচ্ছে না। থাইল্যান্ডে ভিসার জন্য আবেদন করলে আগে ৭ দিনের মধ্যে চলে আসতো। এখন দেড় মাসের একটা সময় লাগে বলে শোনা যাচ্ছে। অনেককে রিজেক্টও করে দিচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সিঙ্গাপুরে ভিসার আবেদন করেও রিজেক্ট হয়েছেন তিনি। পরে তিমোর-লেস্তেতে চলে যান। দেশটি অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়। এ ছাড়া আবেদনের পর তিন বছরের ভিসা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এজন্য সব মিলিয়ে ১৭০ ডলারের মতো খরচ পড়ে।
যুক্তরাজ্যে দুই বছরের ভিসার জন্যও আবেদন করেছিলেন নাদির। ফি সব মিলিয়ে ৮৯০ ডলার। সেখান থেকে এতোদিন যে দেশগুলোতে যাওয়া হয়েছে, সবগুলোর তারিখ চেয়েছিল অ্যাম্বাসি। সব ডকুমেন্ট দেওয়ার পর তারা ভিসা দেয়। তবে রিজেক্ট হয়েছেন তাজিকিস্তানের ই-ভিসার আবেদন করে। এর খরচ ছিল ৩০ ডলার। সব কাগজ দেখার পরও ভিসা দেয়নি দেশটি। উজবেকিস্তানের ভিসাও বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ। কিরগিস্তানে এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছিল ৬০ ডলার খরচে। সেখানেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
শেষ এক বছরে শেনজেন ভিসার আবেদন করে আরেক দফায় রিজেক্ট হন নাদির। নেদারল্যান্ডসের জন্য সুইডিশ অ্যাম্বাসিতে আবেদন করেছিলেন তিনি। ৭-৮ দিন পর পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। তবে ভিসা দেয়নি তারাও।
অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে প্রবেশ, সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়া ও অবৈধ পথে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণসহ নানা কারণে যথাযথ আবেদনের পরও কয়েকটি দেশ থেকে ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা। আর যারা পাচ্ছেন, তাদেরও নানা ধরনের প্রশ্ন ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।