দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
ঢাকাMonday , 28 July 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. কর্পোরেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. বিনোদন
  12. বিশেষ প্রতিবেদন
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আলুচাষিরা আলো দেখছেন না, সরকারের সাড়ার অপেক্ষা

বার্তা কক্ষ
July 28, 2025 9:07 am
Link Copied!

‘ধান, গরু বিক্রি করে আলু চাষ করেছি। এখন বাজারে আলুর দাম নাই। সরকারের কাছে অনুরোধ, ওএমএস-টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রি করে আমাদের বাঁচান। পারলে রপ্তানির ব্যবস্থাও করেন।’

এই আকুতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নানের। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ আর উত্তরের জেলা রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জের আলুচাষিদের আকুতি একই।

আলুচাষিরা চোখে সত্যিই অন্ধকার দেখছেন। অসংগঠিত এই কৃষকদের জন্য আলো হয়ে আসতে সরকারের কাছে ধর্না দিয়েছেন হিমাগার ব্যবসায়ীরা। আলু নিয়ে তারাও বিপাকে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কথা চালাচালি শুরু হয়েছে। একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিব গতকাল রোববার এমন তথ্যই দিয়েছেন সমকালকে।

ঠাকুরগাঁওয়ে গতকাল রোববার হিমাগারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১২ টাকা থেকে পৌনে ১৩ টাকায়। স্থানীয় বাজারে খুচরা পর্যায়ে সেই আলু বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ টাকা দরে। রংপুরে হিমাগারে আলু বিক্রি হয়েছে ১২-১৩ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৪-১৫ টাকায়। মুন্সীগঞ্জে হিমাগার ফটকে ১২-১৩ টাকা আর খুচরা বাজারে ১৮-২০ টাকা দরে আলু বিক্রি হয়েছে। আর ঢাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।

সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, এবার আলুর গড় উৎপাদন খরচ ছিল কেজিতে ১৪ টাকা। এর সঙ্গে হিমাগার ভাড়া যোগ হবে। ফলে সরকারি হিসাবেই প্রতি কেজি আলুতে কৃষক লোকসান গুনছেন। বিভিন্ন জেলার কৃষকরা সমকাল প্রতিনিধিদের যে তথ্য দিয়েছেন তাতে এই লোকসান কেজিতে ১০ টাকার মতো।

এ অবস্থায় হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ভর্তুকি দিয়ে আলু কেনার আবেদন করেছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে অর্থ, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে।

গত সপ্তাহে দেওয়া এই চিঠিতে বলা হয়েছে, গত বছর কৃষক আলুর মূল্য বেশি পাওয়ায় এবার রেকর্ড পরিমাণ এক কোটি ৩০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ৪০ লাখ টন বেশি হওয়ায় আলুর মূল্য বর্তমানে অনেক কম। হিমাগার ফটকে এলাকাভেদে কেজি এখন ১৩ থেকে ১৫ টাকা। অথচ কৃষকের প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৭ টাকা। এর সঙ্গে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর কেজিতে খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২৫ টাকা।

সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেলে আলোচনার মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলোর কৃষি কর্মকর্তারা সমকালকে জানিয়েছেন, এবার দামের যে অবস্থা তাতে অনেক কৃষক আগামী বছর আলু চাষে বিমুখ হতে পারেন। তাতে আগামী বছর আলুর দাম আবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যেমন গত বছর প্রতি কেজি আলু ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এমনকি ঠাকুরগাঁওয়ে এবার মৌসুমের শুরুতে আলু বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছে, কৃষকদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমাগার ফটকে আলুর ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা জরুরি। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের ৫৫ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে দেওয়া চালের পাশাপাশি ১০ কেজি করে আলু দিতে পারে সরকার। এটা সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারে। তারা সারাদেশে টিসিবির মাধ্যমে আলুর ট্রাকসেল করারও পরামর্শ দিয়েছে।

দাম না পাওয়া এবং সংরক্ষণের অভাবে মুন্সীগঞ্জের আলুচাষিদের লোকসান এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেছে জেলার আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। তাদের দাবি, জেলার সিংহভাগ কৃষক এখন দেনায় পড়ে গেছেন। তারা বলছেন, এ অবস্থায় প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ এবং আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা দরকার।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে কিছু আলু কিনে সংরক্ষণ করার প্রস্তাব দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা।

কৃষিবিদরা বলছেন, আলুচাষিদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আসাদুজ্জামান সরকার সমকালকে বলেন, ‘এ বছর আলুর দাম না পাওয়ায় আগামীতে কম সংখ্যক চাষি আলু চাষ করবেন। যখন আলুর চাষ কম হবে, তখন তুলনামূলক দাম বেড়ে যাবে।

হিমাগার মালিকদের চিঠিতে বলা হয়, দাম না বাড়লে ৩৫০টির বেশি হিমাগারে সংরক্ষিত প্রায় ৩৫ লাখ টন আলুর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হিমাগার থেকে খালাস হবে না। এই সাত থেকে ১০ লাখ টন আলু যেখানে-সেখানে ফেললে পরিবেশ বিপর্যয়ের মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। আলু এভাবে ফেলে দেওয়ার চিত্র দেখলে কৃষকরা পুরোপুরি ভেঙে পড়বেন।

বিসিএসের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, এলাকাভেদে কৃষকের খরচের তুলনায় কেজিতে ১০-১২ টাকা কমে আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক বড় লোকসানে পড়ছেন।

জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, টিসিবির মাধ্যমে বিতরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে। আলুর ভর্তুকি বিষয়ে অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের ওপর ভর্তুকির বিষয়টি নির্ভর করছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

খাদ্য সচিব মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এসেছে কিনা, তা তিনি এখনও জানেন না। চিঠি দিলেও কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যেমন হিমাগার গেটে আলুর দর কত হবে? প্রতিদিন অবিক্রীত আলুগুলোর কী হবে? এসব বিষয় চূড়ান্ত করা ছাড়া কিছু বলা যাবে না।

ঢাকায় আলুর কেজি ২০-২৫ টাকা
উৎপাদন এলাকায় দাম কম হলেও রাজধানীতে কিছুটা বেশি। গতকাল ঢাকায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। গত বছরের এই সময় আলুর কেজি ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তাতে অবশ্য ভোক্তারা চাপে ছিলেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক মাসে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দর কমেছে ৫৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানি তেমন বাড়ছে না 
দেশে আলুর উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানি সেই হারে বাড়ছে না। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮ হাজার ৭৭৩ টন আলু। ২০২২ সালে ৭৮ হাজার ৯১০ টন আলু রপ্তানি হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার টন। ২০২৪ সালে তা আরও কমে হয়েছে ১২ হাজার ১১২ টন। তবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে। উদ্বৃত্ত থাকায় রপ্তানি আরও বাড়ানোর তাগিদ কৃষকের।

কৃষি উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আমরা চাই, কৃষক যেন তাঁর উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পান। এ জন্য ওএমএসের মাধ্যমে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করছি। এ ছাড়া কৃষকের আলু সরাসরি বাজারজাত করবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সারাদেশে কৃষকের বাজারগুলো সচল করা হবে। সেখানে কৃষকের উৎপাদিত আলু প্রয়োজনে বিনামূল্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কাজ করছে। তিনি বলেন, কৃষক যদি দাম না পান, ভবিষ্যতে তারা আলু উৎপাদনে আগ্রহ হারাবেন।