দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
ঢাকাMonday , 21 July 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্যপ্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ প্রতিবেদন
  11. রাজনীতি
  12. লাইফস্টাইল
  13. শিক্ষা
  14. সারাদেশ
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

লাশের ওপর নৃশংসতার কারণ ব্রেনের এএসপিডি রোগ

বার্তা কক্ষ
July 21, 2025 12:36 pm
Link Copied!

সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলি করে লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলি করে লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

২০০৬ সালে রাজধানীতে লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করার ভিডিও পুরো দেশবাসী দেখেছে। এরকম অনেক ঘটনা ঘটে, কিন্তু সব ঘটনা মিডিয়ায় না আসার কারণে নজরে আসে না। এসব ঘটনায় একটি প্রশ্ন বারবার উঠছে, হত্যাকাণ্ড বা খুনের পর লাশের ওপর এমন পৈশাচিক নির্মমতা  কেনো হচ্ছে।

এ বিষয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মুনাইম রেজা (মুনিম) বলেন-

খুনিরা অনেক সময় নির্বিঘ্নে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পরে লাশের ওপর চালায় বিভৎসতা। মনে হয় না যে, এটা তাদের কোনোভাবে বিচলিত করে। এটার দু’টি কারণ রয়েছে-এক. খুনিদের এক ধরণের ব্যক্তিত্বের রোগ থাকে, যেটাকে বলে অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (অসামাজিক ব্যক্তিত্বের ব্যাধি)। এ অসুখেরই তীব্র বা গুরুতর অবস্থা হচ্ছে সাইকোপ্যাথ। এ সমস্যার ফলে কোনো অপরাধকাণ্ড ঘটানোর পরে অপরাধীর মধ্যে স্বাভাবিক অনুশোচনা থাকে না।

তিনি বলেন, এন্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের কারণে হত্যাকারীদের মধ্যে কোনো গিল্টি ফিলিংস হয় না। তাদের যে নৈতিক বিবেচনাবোধ সেটাও সাধারণ মানুষের মতো থাকে না। এ কারণে একটা অপরাধ ঘটানোর পরে স্বাভাবিক মানুষ সেটা দেখার পরেও যেমন ঘাবড়িয়ে যায় বা বিচলিত বোধ করে, হত্যাকারী নিজেই ঘটানোর পরেও এটা তাদের মধ্যে নূন্যতম অনুভূতি তৈরি হয় না। ধরেন, খুনিরা খুবই গুরুতরভাবে একজনকে খুন করলো, বিভৎসতা দেখালো সেখান থেকেও তাদের মধ্যে কোনো গিল্টফিলিং তৈরি হবে না। এটি পার্সোনালিটি রোগের একটি প্যার্টান।

যে কারণে হত্যাকারী অনুশোচনা করে না
ডা. মো. মুনাইম রেজা বলেন, দ্বিতীয়ত. এর বাইরে আরেকটা ব্যাখ্যা এখানে মাথায় রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে কেউ যখন এরকম খুন করে, তখন সে খুনটাকে রেশনালাইজ করে। অর্থাৎ এ খুনটা করা তার জন্য যৌক্তিক, এরকম একটি ব্যাখ্যা দাঁড়া করায়। যেমন- ধরেন পলিটিক্যাল কিলিংয়ের কথা আমি বলি, এছাড়া অনেক সময় ধর্মকে ব্যবহার করে হত্যা করা হয়। যিনি খুন করেন, তিনি এই খুনের পেছনে একটা যৌক্তিকতা বের করে নিতে চান। যে আমি যে কাজটা করছি এটাই আসলে ঠিক, হ্যাঁ এবং এটা করাটাই উচিত, এটা করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তিনি যখন এভাবে ভেবে নেন, তখন তার মধ্যে অনুশোচনার জায়গাটা আর থাকে না। বরং তখন সে তার মধ্যে একটা ভালো ফিল হয় যে, না আমি একটা ভালো কাজ করছি। এই দুইটা ব্যাপারই মূলত হচ্ছে এইখানে ঘটে।

হত্যাকাণ্ডের সময় ব্রেন কীভাবে কাজ করে
ডা. মুনাইম রেজা বলেন, এ ধরনের খুনের সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা করতে হলে কয়েকটা বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রথমত, ব্রেইনের স্ক্যান। যারা এ ধরনের ভায়োলেন্ট অ্যাটাক করেন, তাদের ব্রেইনের স্ক্যান করে দেখা গেছে, ব্রেইনের কিছু জায়গার কার্যক্রম অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। যেমন- ব্রেইনের দুইটা জায়গা আছে, একটিকে বলা হয় প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স আর আরেকটি অ্যামিগডালা। এ দুইটাতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সটা মূলত মানুষের ডিসিশন মেকিং, মানুষের মোরালিটি, মানুষের জাজমেন্ট এই ব্যাপারগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়াও তিনি বলেন-

অ্যামিগডালা মানুষের ইমোশনকে কন্ট্রোল করে। যারা এ ধরনের অপকর্ম করেন, তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং অ্যামিগডালা এ দুইটার কাজেরই ঝামেলা থাকে। প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে তার ডিসিশন মেকিং, মোরাল জাজমেন্ট এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অ্যামিগডালা ওভার অ্যাক্টিভ থাকে। ওভার অ্যাক্টিভ থাকার কারণে পেশেন্ট খুবই বেশি হাইটেন্ড ইমোশনে থাকে। এবং সেই ইমোশন বেশি থাকার কারণে তার তখন যে লজিক্যাল চিন্তা, মোরাল যে চিন্তা, সেটা ওইভাবে কাজ করে না। এ দুইটা ব্যাপার ঘটে আরেকটা জিনিস হয়। মানুষ যখন খুবই বেশি ইমোশনাল থাকে, তখন তার মধ্যে রিয়েলিটি সেন্স কমে যায় এবং তার মধ্যে ইমপ্যাথি কমে যায়। যেকোনো কাজ করার ব্যাপারে বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করে না।

এ চিকিৎসক বলেন, আমরা যখন কোনো একটা কাজ করার ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ জাগে আমরা কিন্তু বিবেচনা করি যে এটা করা কি ঠিক হবে,  না হবে না। খুব বেশি আগ্রহ জাগলেও কিন্তু আমরা অনেক সময় সেটাকে কন্ট্রোল করতে পারি এটাও ব্রেইনের একটা জায়গা নিয়ন্ত্রণ করে। সেটাকে বলে অরবিটোফ্রন্টাল কর্টেক্স। তাদের ক্ষেত্রে এই অরবিটোফ্রন্টাল কর্টেক্সে এবনরমালিটি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মধ্যে শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনটা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে ভিন্নরকম থাকে এবং বিভিন্নরকম থাকে দেখেই এ ধরনের মানুষদের একটা বড় অংশই বিভিন্ন ধরনের রোগের ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে। তার মধ্যে একটা ক্যাটাগরি হচ্ছে অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (এএসপিডি)।