বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনর্গঠন বা পুনঃতপশিলের সুযোগ ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের নীতি-সহায়তার আওতায় ডাউনপেমেন্ট, ঋণের মেয়াদসহ বিভিন্ন শর্ত শিথিল করতে পারবে ব্যাংক। ৫০ কোটি টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রেও বিশেষ এ সুবিধা কার্যকর করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই এ-সংক্রান্ত একটি সমন্বিত সার্কুলার জারি করবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতপশিল বা পুনর্গঠনের জন্য গত জানুয়ারিতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। তবে এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের নীতি-সহায়তা দেওয়া হবে সে বিষয়ে বিশেষ কোনো কাঠামো ওই সময় করা হয়নি। এরই মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১২শর বেশি আবেদন জমা পড়েছে। কোনো কোনো আবেদনের সঙ্গে ২৮টি পর্যন্ত ব্যাংকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুনর্গঠিত কমিটি। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করা অনেক সময় সাপেক্ষ। যে কারণে নতুন কমিটি নীতি-সহায়তার বিষয়টি ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। কেবল যেসব কেস নিষ্পত্তি করার সক্ষমতা ব্যাংকের নেই, কেবল তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে পারবে। সব কিছুই করা হবে নির্ধারিত সার্কুলারে উল্লিখিত নীতিমালা মেনে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ব্যাংকগুলো আগের মতো আর খেলাপি ঋণ লুকানোর সুযোগ পাচ্ছে না। যে কারণে গত এক বছরে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ঠেকেছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়। মোট ঋণের যা ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। হঠাৎ খেলাপি এভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতিতে পড়েছে। যে কারণে এবার হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পেরেছে। আবার আগামী বছর কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি হলে ওই ব্যাংক যত মুনাফা করুক লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এসব কারণে ব্যাংকগুলো এখন খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাপক তৎপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হঠাৎ কঠোরতার কারণে কোনো ব্যবসা যেন বন্ধ হয়ে না যায় সে জন্য ব্যাংকগুলোই নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে সুবিধা দিতে পারবে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কঠোরতা দেখালেও বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে কখনও বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। করোনার দোহাই দিয়ে ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন শিথিলতার কারণে ঋণ পরিশোধ না করার নতুন একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়। গত পাঁচ বছরে পুনঃতপশিল হয় দুই লাখ ৫৮ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২৪ সালে পুনঃতপশিল হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩ সালে রেকর্ড ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতপশিল হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সার্কুলার না করে গত জানুয়ারিতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, কভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিম্ন প্রবৃদ্ধি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে সৃষ্ট অভিঘাত মোকাবিলা করে অর্থনীতি চলমান রাখা এবং ব্যাংক খাতকে সুসংহত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি ৫০ কোটি ও তদূর্ধ্ব অঙ্কের খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সুপারিশ করবে। তবে নির্দিষ্ট কাঠামো না থাকায় এবং শুধু ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণের কথা বলায় পরবর্তীতে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ রকম অবস্থায় কাঠামোর আওতায় আনা হচ্ছে।