জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা হয়তো মারা যাবো। আমাদের হয়তো গুলি করে হত্যা করবে। কিন্তু প্রিয় ভাইয়েরা, আওয়ামী লীগমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব প্রত্যেকটা তরুণ প্রজন্মকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় প্রতিহিংসার রাজনীতি করতো। আওয়ামী লীগকে আমরা লগি-বৈঠা হাতে দেখেছি, তাদেরকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দেখেছি, শাপলা হত্যাকাণ্ডে আলেমদেরকে পাখির মতো গুলি করতে দেখেছি। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করতে দেখেছি।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে রাজবাড়ী শহরের রেলগেটে শহীদ স্মৃতি চত্বরে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা শেষে পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গতকাল এই সময়ে একটা দল যারা গত ১১ মাস গর্তে ছিল, তারা অপেক্ষা করছিল কখন আমাদের মারা যায়। আবার আরেকটা দল ঢাকায় মিডিয়ার সামনে বসে আওয়ামী লীগ যে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে সেটার বৈধতা উৎপাদন করেছে। তারা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ দলটিকে প্রতিরোধ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের যেই কালচারাল উইং, মিডিয়া উইং—তাদেরকেও প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বসুন্ধরা মিডিয়ার কথা বার বার বলেছি। ওই মিডিয়ায় ভাড়া খাটা কিছু জ্ঞানপাপী ও বুদ্ধিপাপী রয়েছেন। ভাড়ায় খাটা এইরকম দেওলিয়া বুদ্ধিজীবী রয়েছে। তারা এসব আক্রমণের বৈধতা উৎপাদন করে। আমাদের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে এই আক্রমণের বৈধতা উৎপাদন করার জন্যই তাদের কলম আবার সক্রিয় হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছিল নাহিদ, সারজিস, আখতার, হাসনাত, নাসির মনে হয় এগুলো একটা নাম। তারা মনে করেছিল, এই কয়জনকে হত্যা করলে নতুন বাংলাদেশের যে লড়াই সেটা হয়তো থেমে যাবে। এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর প্রত্যেকটা মানুষ আবার আবু সাঈদ হয়ে উঠেছিল। আমাদের মৃত্যুর পর প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা বিপ্লবী সন্তান যারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তারা কেউ না কেউ আবার নাহিদ হয়ে উঠবে।
তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার আলেম সমাজের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ সেই দিন থেকেই ঘুরে দাঁড়াবে যেদিন বাংলাদেশ থেকে সমূলে আওয়ামী লীগ নির্মূল হবে। কর্পোরেট সমাজ, এই আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া সমাজ, তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে মুজিবের বুকের মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা গতকাল স্লোগান দিয়েছি। মুজিবের মাটিতে মুজিববাদ মুর্দাবাদ।
তিনি বলেন, প্রিয় রাজবাড়ীবাসী আমাদের আগে রাজনীতি ঠিক করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত এই নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী দেশ থেকে নির্মূল করা যাবে না ততদিন পর্যন্ত ফ্যাসিজম থেকেই যাবে। আপনারা গতকাল দেখেছেন, আমরা গত ১১ মাস ধরে যে মিডিয়ার বিরুদ্ধে ফাইট করে যাচ্ছি তারা বার বার বলছে, আওয়ামী লীগকে নাকি সুযোগ দেওয়া উচিত। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে নাকি সুযোগ দেওয়া উচিত। আওয়ামী লীগ আবার কি হয়ে ফিরে আসবে গতকাল সেটার একটা টেস্ট ম্যাচ আমরা দেখেছি।
তিনি আরও বলেন, যারা পূর্বের প্রজন্ম তাদের আজকের এই কুলশিত রাজনীতির দায়ভার নিতে হবে। কম্প্রোমাইজ রাজনীতির কারণে আজকের এই তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্ব তুলে নিতে হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক দল গঠন করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েছি। আমরা এখানে প্রত্যেকটা মানুষ যদি মারা যাই, প্রত্যেকটা মানুষকে যদি হত্যা করা হয় প্রিয় রাজবাড়ীবাসীর যুবক, তরুণ প্রজন্ম, ভাই-বোনেরা আপনাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব সবাইকে একেকজন বিকল্প হয়ে উঠতে হবে।
পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজবাড়ীর সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা।
এ সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, ডা. তাজনুভা জাবীন, দক্ষিণ অঞ্চলের সংগঠক মো. আতাউল্লাহসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় এবং জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন।