দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
ঢাকাMonday , 14 July 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. কর্পোরেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. বিনোদন
  12. বিশেষ প্রতিবেদন
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ময়লা বাণিজ্যে বিএনপি নেতাদের পকেটে যাবে ৪১৮ কোটি টাকা

বার্তা কক্ষ
July 14, 2025 8:48 am
Link Copied!

বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহে গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পরিচ্ছন্ন কর আদায় করেছে ১৩১ কোটি টাকা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে তাদের প্রায় ১০০ কোটি টাকা। জনবলও রয়েছে প্রায় ৪ হাজার। এর মধ্যে ঘরে ঘরে গিয়ে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের নামে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ২ হাজার লোকবল। এখন বর্জ্য সংগ্রহের সেই কাজটি তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। বিনিময়ে নগরবাসীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আদায় করবে তারা। এ কাজটি পাচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা। ইতোমধ্যে তাদের হাতে ১৯টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হিসাব বলছে, এ খাতে বছরে প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্য করবে ৪১৮ কোটি টাকা।

বিপরীতে নামমাত্র টাকা পাবে সিটি করপোরেশন। লাভজনক এই ব্যবসা নিয়ে নৈরাজ্য ও দুর্বৃত্তায়নের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেটি উড়িয়ে দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব তুলে দিলে পরিচ্ছন্ন কর আদায় না করার দাবি জানিয়েছেন করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা।

৪১টি ওয়ার্ডে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিতে দরপত্র আহ্বান করে চসিক। এতে ১৯১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাকি ওয়ার্ডগুলোতে প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কাজ পাওয়া ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নাম সমকালের হাতে এসেছে।

এগুলো হলো– ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের কাজ পেয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জমির উদ্দিন নাহিদের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাতৃভূমি এন্টারপ্রাইজ, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে নগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী সাকির প্রতিষ্ঠান এসআরএস এন্টারপ্রাইজ, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন নাবিলের প্রতিষ্ঠান নাবিল এন্টারপ্রাইজ, ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এন মো. রিমনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিমন কনস্ট্রাকশন, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি হুমায়ুন কবির চৌধুরী রুদ্রের প্রতিষ্ঠান অ্যাকুয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলাউদ্দিনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মদিনা এন্টারপ্রাইজ, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ খান, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে যুবদল নেতা মো. ইমতিয়াজুর রহমানের প্রতিষ্ঠান গ্রিন এন্টারপ্রাইজ, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসম্পাদক ফারহান ফুয়াদের প্রতিষ্ঠান বিন ফুয়াদ এন্টারপ্রাইজ এবং ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহরে সাবেক ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা শাহিনূর ইসলামের প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এ ট্রেডার্স।

এ ছাড়া ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের দায়িত্ব পেয়েছে বিএনপি সমর্থিত জামসেদ হোসেনের প্রতিষ্ঠান লাইমেক্স মাল্টি ট্রেড, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে মোস্তফা মো. জাবেদের প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডিং, ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে শাহজাহানের প্রতিষ্ঠান মেসার্স গাউসিয়া ট্রেডার্স ও ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে মো. জিয়া উদ্দীন জাবেদের প্রতিষ্ঠান নগর সেবা। সাবেক নৌবাহিনী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (অব.) মহসিনুল হাবিব পেয়েছেন ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড ও ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের কাজ।

প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহ সেবা প্রদানকারী (পিসিএসপি) প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদনের শর্ত অনুযায়ী, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত জনবল, রিকশা-ভ্যান, হাতগাড়ি, ইঞ্জিন ট্রলি ও অন্য সরঞ্জাম থাকতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে, তাদের কারোই অভিজ্ঞতা ও সরঞ্জাম নেই। জানতে চাইলে নগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী সাকি বলেন, এই কাজে আমার অভিজ্ঞতা নেই। আমার সঙ্গে যারা কাজ করবে, তাদের আছে। বর্জ্য সংগ্রহে যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে, তা সংগ্রহ করছি। আশা করছি, শিগগির কাজ শুরু করতে পারব। একই ধরনের কথা জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন নাবিলও।

বাণিজ্য হবে ৪১৮ কোটি টাকার 
চসিকের হিসাবে নগরে হোল্ডিং রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার। অধিকাংশ হোল্ডিংয়ে ৬ থেকে ১২টি করে ফ্ল্যাট বা বাসা রয়েছে। একটি হোল্ডিংয়ে গড়ে ছয়টি ফ্ল্যাট বা বাসা থাকে। আর প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে গড়ে যদি ৭০ টাকা আদায় করা হয়, এ হিসাবে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ মাসে প্রায় ৯ কোটি ২৪ লাখ টাকার আসবে। বছরে যা প্রায় ১১১ কোটি টাকা। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে ২ হাজার টাকা আদায় করা হলে বছরে ৩০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার ময়লা বাণিজ্য হবে।

সংশ্লিষ্টরা যা বললেন
নগরের চকবাজারের চক মালঞ্চ রেস্তোরাঁর মালিক রেজাউল করিম বলেন, রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রতি মাসে এমনিতে আমরা বকশিশ দিয়ে থাকি। তার বিনিময়ে তারা বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার পর ড্রাম ধুয়ে-মুছে দেয়। এখন এই কাজ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দিলে অরাজকতা তৈরি হবে। এটা লাভজনক ব্যবসা। ভাগাভাগির জন্য হানাহানি হবে।

চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী বলেন, বর্জ্য অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশনকে ট্যাক্স দিচ্ছি। আবার এখন ময়লা সংগ্রহের জন্য টাকা দিতে হবে। একই কাজের জন্য দু’বার কেন কর দেব? এই প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আইন অনুযায়ী বাসাবাড়ি থেকে নয়, নির্দিষ্ট স্থান থেকে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। নগরবাসীর কাছ থেকে পরিচ্ছন্ন কর নেওয়া হয় নির্দিষ্ট স্থান থেকে ময়লা অপসারণের জন্য।

বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলীয় বিবেচনায় নয়, দরপত্রের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কাজ দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্জ্য সংগ্রহের কাজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া বেআইনি। তাহলে সিটি করপোরেশনের কাজটা কী? এটি অবৈধ ময়লা বাণিজ্যকে বৈধতা দেওয়া। একদিকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য কর নিচ্ছে, আবার একই কাজের জন্য চার্জ কেন দেবে করদাতারা? এই কাজ দলীয় ব্যক্তিকে দেওয়া আরও ভয়াবহ। এটা স্পষ্টত দলীয়করণ। এটি তাদের বন্ধ করতে হবে।