সারাদেশের পাঁচ শতাধিক কলেজ ও মাদ্রাসা এবার একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা দেখার ক্ষেত্রে সরকার ‘উদার নীতি’ থেকে সরে আসায় এ বছর মাধ্যমিক স্তরে পাসের হার কমেছে। এ কারণে একাদশ শ্রেণির অন্তত সাড়ে ১৩ লাখ আসন ফাঁকা থাকতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আহ্বান করা হতে পারে। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটা, বাদ যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, ৯ সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ; যা গত বছর ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া গতবারের চেয়ে এবার জিপিএ ৫ কমেছে ৩৮ হাজার ৮২৭। ১১ শিক্ষা বোর্ডে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। ৬ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে আসন আছে ২৬ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। কারিগরি ছাড়াই, সব শিক্ষার্থী যদি শুধু কলেজ-মাদ্রাসায় ভর্তি হয়, তাতেও একাদশ শ্রেণিতে সাড়ে ১৩ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের দাবি, বর্তমানে দেশে সাধারণ কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯ হাজার ৩১৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪২টি।
একাধিক কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছরই একাদশ শ্রেণিতে কিছু আসন খালি থাকে। তবে এ বছর সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হওয়ায় এ সংখ্যা অনেক বাড়বে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কলেজ শাখা সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত দেখা যায়, প্রতিবছর এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় না। এ বছরও যদি সেটা হয়, তাহলে খালি আসনের সংখ্যা আরও বাড়বে।
একাধিক অধ্যক্ষ জানান, উপজেলা ও মফস্বল এলাকার কলেজগুলো একাদশে শিক্ষার্থী সংকট ভুগলেও রাজধানীর নামি কলেজে ভর্তিচ্ছুদের লড়াই বেশ তীব্র হবে। তবে এবারও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে না। মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতেই ভর্তি করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. রিজাউল হক বলেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আমরা সভা করেছি। এ সপ্তাহে আরেকটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তি নীতিমালা জারি করা হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আবেদন নিতে চাই। এ ব্যাপারে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বুয়েট।
যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ কোটা
একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটা, বাদ পড়ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। ভর্তির একটি খসড়া নীতিমালা এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। এতে যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটা। যেখানে গণঅভ্যুত্থানে আহত বা তার পরিবারের সদস্যরা বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন।
একই সঙ্গে নীতিমালা থেকে বাদ পড়তে পারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। স্বাধীনতা যুদ্ধের এত বছর পর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা’ রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মনে করছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ জন্য এ কোটায় কলেজে ভর্তিতে আসন ফাঁকা বা সংরক্ষিত রাখার যৌক্তিকতা দেখছেন না তারা। নীতিমালা চূড়ান্ত করা নিয়ে গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে।
সর্বশেষ গত বছর প্রণীত ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে মেধা কোটায় ৯৩ শতাংশ, বাকি ৭ শতাংশ বিভিন্ন কোটায় ভর্তি করানো হয়। যার মধ্যে ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। বাকি ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন ২৮টি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের জন্য।
ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে সব ধরনের কোটা প্রথা বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। নাতি-নাতনি কোটা বাতিল হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য একাদশ শ্রেণিতে এখন আর কোটা রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই। তাছাড়া পোষ্য কোটা নিয়েও দীর্ঘদিন সমালোচনা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের এ সুবিধা দেওয়ারও পক্ষে নয় শিক্ষা বোর্ডগুলো।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চব্বিশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এবারই প্রথম একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি শুরু হচ্ছে। সীমিত হারে জুলাইযোদ্ধা বা জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য কোটা রাখা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এ কোটা হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য হবে। অর্থাৎ, আগামী দুই বা তিন বছরের জন্য থাকবে। পরে বিলুপ্ত করা হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.