সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ কিংবা নিম্নকক্ষ নির্বাচন কোনো মতেই মানবে না বিএনপি। এ ছাড়া রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগসহ কোনো বিভাগকেই দুর্বল করার পক্ষে নয় দলটি।
সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিচার, নির্বাচনসহ সব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কামরুল হাসান
সালাহউদ্দিন আহমেদ: অনেক যুক্তি। প্রথম যুক্তি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এটা নতুন চিন্তা। আগে এর কোনো অভিজ্ঞতা কিংবা প্রচলনের ইতিহাস নেই। দ্বিতীয়ত, আমাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থায় মানুষ তার নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় একজন ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখে অভ্যস্ত। যিনি তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তাঁকে দেখেই ভোট দেয়। একাধিক প্রতিনিধি মানুষের মধ্যে ভোটের আগ্রহ কমিয়ে দেবে এবং কার্যকরী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো বিধানও এখানে নেই। একজন জনপ্রিয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি নির্বাচনে জয়লাভ করলেও কোথাও এমপি হতে পারবেন না। এ রকম বহুবিধ অসুবিধা আছে পিআর পদ্ধতিতে। এসব কারণে কোনো মতেই পিআর মানা সম্ভব না।
তারা মনে করছে, পিআর পদ্ধতিতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে ভোটের শতকরা হিসাবে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এ দেশে সবচেয়ে বড় দল রেকর্ড ভোট হয়তো ৪০ শতাংশ পেয়েছে। সেই হিসাবেও পিআর পদ্ধতিতে ৩০০ আসনের মধ্যে ১২০ আসন পাবে। তাহলে সরকার গঠন করতে পারবে না। এ রকম জটিল অবস্থায় কোয়ালিশন সরকার গঠন হবে এবং ঝুলন্ত সংসদ হবে। এতে কোনো সরকারই দেশ পরিচালনা করতে পারবে না। কিন্তু ওই সব ক্ষুদ্র দল বা যারা জনগণের কম প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের সুবিধা হবে। তারা যদি ১০ ভাগ ভোট পায়, তাহলে ৩০টি আসন পাবে। কেউ ৫ ভাগ পেলে তারা ১৫টি আসন পাবে। এখন এসব দলের প্ররোচনায় যদি পিআর পদ্ধতি চালু হয়, তাহলে বাংলাদেশে সব সময় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে যে অসুবিধাটা হবে, তাতে কি আমরা রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যেতে পারব?
রাজনীতি হচ্ছে নির্বাচনী কৌশল। আগামীতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। এখন বিচার বিভাগ প্রায় স্বাধীন এবং দুদকের কার্যক্রম মোটামুটি দৃশ্যমান। এই অবস্থায় জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিলে কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে সেটা জনগণের ইচ্ছা। এখানে তো আমাদের হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। সংবিধানে জনগণ হচ্ছে ক্ষমতার উৎস। সে ক্ষেত্রে তারা কি জনগণের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপরে হস্তক্ষেপ করার মতো বিষয় বিবেচনা করতে পারেন? একজন স্বৈরাচার হয়েছিল সেটা মাথায় রেখেই সব কিছু যদি আমরা সাজাতে থাকি, তাহলে তো সংসদীয় ব্যবস্থাই থাকে না। তাহলে তো নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করে, সেটাকে অকার্যকর করতে হয়। যে প্রবণতা এখন দেখছি। নির্বাহী বিভাগকে তার আইনের এবং সাংবিধানিক সীমানার মধ্যে থেকে কাজ করতে দিতে হবে। সে যেন সীমা লঙ্ঘন না করে। সংবিধানের তিনটা বিভাগ পরস্পর পরস্পরের ভারসাম্য হিসেবে কাজ করবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেলে কারোরই স্বৈরাচার হওয়ার সুযোগ থাকবে না। সরকার কাঠামো দুর্বল করে রাষ্ট্র কোনোভাবে এগোতে পারবে না।
আমরা উচ্চকক্ষের বিষয়ে আমাদের মতামত দিয়েছি। সেটা হচ্ছে, নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে হবে। যেভাবে সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্ধারণ করা হয়। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্য দিয়ে হতে হয়। উচ্চকক্ষে পিআর থাকলে সেটা কোনোদিনই হবে না। তখন অন্যদের বক্তব্য ছিল আমরা (বিএনপি) তো সংবিধান সংশোধন চাই না। কিন্তু সংবিধান কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়। এটা ১০ বছর, ২০ বছর পরও সমাজের চাহিদার ভিত্তিতে, মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে পরিবর্তন হতে পারে এবং পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক।