দেশের প্রবীণ নাগরিকদের চিকিৎসাসেবায় বিশেষ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বয়স্কদের চিকিৎসাসেবায় আলাদা বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী আগস্টে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ‘প্রবীণ ইউনিট’ চালু হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবীণ ইউনিটে থাকবে আলাদা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা। থাকবে আলাদা টিকিট কাউন্টার। তাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বাসানো হবে টয়লেট। রাজধানীতে শুরু হওয়ার পর ধাপে ধাপে সারাদেশে এই সেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী। এই তথ্য বয়স্ক জনগণের সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত দেয়। প্রবীণদের চিকিৎসাসেবায় অগ্রাধিকার দিয়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৮ সালে এমন একটি ইউনিট চালু করা হয়েছিল। বর্তমানে সেটি কার্যকর নেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য এখনই বিশেষ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে তা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো আজ শুক্রবার বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তরুণদের ক্ষমতায়ন।’
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, প্রবীণদের শারীরিক সমস্যা সাধারণত জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। যেমন– ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁটুব্যথা, বার্ধক্যজনিত মানসিক সমস্যা ইত্যাদি। এই রোগগুলোর ব্যবস্থাপনায় সময়, সচেতনতা ও আলাদা মনোযোগ প্রয়োজন। তাই তাদের জন্য বিশেষ ইউনিট স্থাপন সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের প্রবীণদের নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ না দিলে এই ইউনিটগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে না। তাই জনবল উন্নয়নেও নজর দেওয়া জরুরি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সাইদুর রহমান সমকালকে বলেন, আগস্টে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবীণ ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হবে। এর পর সরকারি অন্যান্য চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রেও এই সেবা চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রবীণদের চিকিৎসা ও সেবা কার্যক্রমে যুক্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে বড় পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এতে শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও যুক্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন চালু হতে যাওয়া ইউনিটগুলোতে শুধু চিকিৎসা নয়, প্রবীণদের স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদার কথা মাথায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে। টিকিট কেটে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর পরিবর্তে থাকবে আলাদা কাউন্টার, বসার সুবিধা ও সহায়ক পরিবেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ শুধু প্রবীণদের জীবনমান উন্নয়নেই নয়, দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আহমেদ এহসানূর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে প্রবীণের সংখ্যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের চেয়েও বেশি। প্রবীণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বয়সজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবায় এখনই বিনিয়োগ না করলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বড় ধরনের সংকটে পড়বে। আমাদের মৌলিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে মা, নবজাতক ও শিশুকে ঘিরে। এখন আমাদের ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর চেয়েও বেশি। সামনের দিনে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এ জন্য আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার, স্বাস্থ্য অর্থায়ন, স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা, ওষুধ পরিকল্পনা ও সেবায় এ গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা করতে হবে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বড় ঝুঁকিতে পড়বে। এ জন্য এখনই অর্থায়ন জরুরি।
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ-২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি–৩৬ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। এর পর ফুসফুসের সংক্রমণ ও যক্ষ্মায় মৃত্যু হয় ১৯ শতাংশের। দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগে ৯ শতাংশ, নিওপ্লাজমে ৮ শতাংশ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে ৫ শতাংশ, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার ৫ শতাংশ, পরিপাকতন্ত্রের রোগে ৪ শতাংশ, অন্ত্রের প্রদাহে ৪ শতাংশ, স্নায়বিক সমস্যায় ২ শতাংশ এবং অন্যান্য রোগে মৃত্যু হয় ৮ শতাংশ মানুষের। এসব রোগে মূলত বেশি ভোগেন বয়স্করা। তাই তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইয়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনায় বয়স্ক ব্যক্তি, নারী এবং প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বয়স্ক ও নারীদের জন্য আলাদা সেবা দেওয়া হবে।’
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.