প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলের মানুষের কাছে যেন এক নীরব মৃত্যুকূপ। হঠাৎ করেই আকাশ মুখ গোমড়া করে, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াল এক অশনি সংকেত। তখন জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা, এক অনিশ্চয়তার থমকে যাওয়া মুহূর্ত। কখনও কেউ সেই মৃত্যুকূপ ভেদ করে ফিরতে পারেন জীবনের আলোতে, আবার কেউ হারিয়ে যান চিরতরে।
[caption id="attachment_2218" align="aligncenter" width="827"]
মো. মোবারক হোসেন[/caption]
তেমনই মৃত্যুকূপে হারিয়ে যাওয়া একজন মো. মোবারক হোসেন। এক দাগে তার ছিল ২২ বিঘা জমি। সেই জমিতে ঘের করে চিংড়ি চাষ করতেন। বাজারের ওপর ছিল বড় মুদি দোকান। সুন্দরবনকেন্দ্রিক মাছ ধরা, মধু আহরণের ব্যবসাও ছিল তার। যৌথ পরিবারের বাড়িতে ছিল পাকা ১০টি ঘর। সেখানে সারাদিন হই-হুল্লোড় লেগেই থাকতো। এলাকার মাতব্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সব মিলিয়ে একটি সুখের সাজানো পরিবার ছিল মোবারক হোসেনের। কিন্তু ২০০৯ সালে আইলার এক ধাক্কা কেড়ে নিয়েছে তার সবকিছু। ধনী থেকে একদিনেই ফকির হন তিনি।
এখন তার ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই। হারিয়েছেন বাবা-দাদাসহ পূর্বপুরুষদের কবরও। কবরের সামনে দাঁড়িয়ে যে একটু কাঁদবেন, সেটাও পারেন না। আইলার উচ্চ জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়েছে তার সব ধরণের আবেগ-অনুভূতি। ১৬ বছর পার হলেও এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি মোবারক হোসেনের পরিবার। তার বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণবেদকাশী ইউনিয়নের পাতা জোড়সিং গ্রামে। ওই গ্রামের উত্তর-পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী। নদীর ওপারেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন- সুন্দরবন।
[caption id="attachment_2215" align="aligncenter" width="747"]
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের কুশারহুলা গ্রামে মোবারক হোসেনের বর্তমান বাড়ি[/caption]
২০০৯ সালের ২৫ মে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এসময় নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বাড়ে ৮-১০ ফুট। ওই জোয়ারেই সর্বনাশ হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের। বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় শত শত গ্রাম। বাড়ি ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসে হাজার হাজার পরিবার। সহায় সম্বলহীন এসব পরিবারের অধিকাংশই পাড়ি জমান খুলনা, ঢাকা, ফরিদপুর, রাঙ্গামাটিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ওই পরিবারগুলোরই একটি মোবারক হোসেনের পরিবার। পাতা জোড়সিং গ্রামে একেবারে তার বাড়ির সামনে থেকেই ভেঙে গিয়েছিল নদীর বাঁধ।
ভিটেমাটি হারিয়ে আইলার পরদিনই ট্রলারে করে পরিবার নিয়ে খুলনা শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন মোবারক হোসেন। সেখানেও তাকে পদে পদে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। যখন তার ভিটামাটি নেই, ঘরে খাবার নেই, পরার কাপড় নেই, তখনও সরকার তার পক্ষে এগিয়ে আসে নি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা হওয়ায় সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা তাকে দেওয়া হয়নি। পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে কেটেছে তাদের।
মোবারক হোসেন এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের কুশারহুলা গ্রামে। গত ১৬ বছরে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন নতুন করে বাড়ি করেছেন সেখানে। টিনের ছাউনি ও বেড়ার তৈরি বাড়ি ঘিরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
মোবারক হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আইলার দুই বছর আগে বড় ছেলে মোশারফ হোসেন এইচএসসি পাশ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। আইলার সময় ছোট ছেলে মফিজুল ইসলাম এইচএসসি পাশ করে খুলনার একটি কলেজে স্নাতক পড়ছিলেন। আর ছোট মেয়ে সাদিয়া সুলতানার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর।
বড় ছেলে আগে থেকে সরকারি চাকরি করায় আর্থিকভাবে কিছুটা ভালো আছেন। তবে আইলার সময় উদ্বাস্তু হওয়ায় ছোট ছেলের লেখাপড়া আর এগোয়নি। স্নাতক শেষ করতে পারেননি তিনি। ছোট ছেলেকে একটি সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য এক প্রতারকের কাছে দুই লাখ টাকা দিয়েছিলেন। ওই প্রতারক তার চাকরিও দেয়নি, টাকাও আর ফেরত দেয়নি। দ্বিতীয় দফা প্রতারণার শিকার হন ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে গিয়ে। ২০১৪ সালে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে আড়াই লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন এক দালালের কাছে। ইতালিতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ছেলেকে আর বিদেশে পাঠাতে পারেননি। এমনকি দালাল আর টাকাও ফেরত দেয়নি। বর্তমানে মোবারক হোসেনের ছোট ছেলে মফিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাভার ইপিজেডের একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করছেন। দেখভালের লোক না থাকায় তাদের আট বছরের ছেলেকে রেখে গেছেন দাদার কাছে। মফিজুলের ছেলের বয়সের তুলনায় বুদ্ধি বেশ কম বলে জানান তার দাদা মোবারক।
দক্ষিণ বেদকাশি চারদিকে নদী দিয়ে ঘেরা একটি ইউনিয়ন। পানি যেন লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নদীর চারপাশে উচু বাঁধ দিয়ে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বাঁধ দিয়ে লোকালয় রক্ষার এই পদ্ধতিকে পাউবোর ভাষায় বলে পোল্ডার। আইলার উচ্চ জোয়ারে ওই বাঁধের কয়েকটি স্থানে ভেঙে যায়। এতে পুরো ইউনিয়নটিই ডুবে যায় সাগরের নোনা পানিতে। প্রায় চার বছর ওই ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে নিয়মিত জোয়ারভাটার পানি আসা-যাওয়া করেছে।
আইলার দিনের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মোবারক হোসেন। সেদিনের স্মৃতি মনে করতেই চোখের কোনে পানি চলে আসে, আবেগে গলা কেঁপে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতিছি নদীতি পানি বাড়তিছে। মুহুর্তেই তা বাঁধ ছাপায় যায়। কিছুক্ষণির মধ্যিই বাড়ির সামনের বাঁধ ভাঙি যায়। বাড়ির পাশে নৌকা রাখা ছিল। কোনো রকম নৌকায় করি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা বাঁধের কাছে যায়ি জীবন বাঁচাই।’
তিনি বলেন, ‘বাড়ির কোনো কিছুই নিতি পারিনি। সব ভাসায় নিয়ে গেছে। আসবাবপত্র যা ছিল সব তুফানে ভাঙিচুরি নষ্ট হয়ি যায়। এ কারণে কোনোকিছু না নিয়েই পরদিন একটা ট্রলার ভাড়া করি খুলনায় চলি আসি। খুলনায় যখন আসি তখন আমি একিবারে নিঃস্ব। দুই দিন পর খুলনায় আইসে ভাত খাই। পরিচিত জনেরা বাড়ি থ্যাকি পুরোনো জামাকাপড় দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে। আইলায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো সম্পদ নষ্ট হয়িছে। এলাকায় রাজার মতো ছিলাম, একদিনেই ফকির হয়ি গিছি।’
গত ১৬ বছরে মোবারক হোসেন কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও আনসার আলী তা পারেননি। পাশাপাশি বাড়ি ছিল তাদের দুইজনের। আইলার পরদিনই খুলনায় চলে এসেছিলেন মোবারক হোসেন। তবে থেকে গিয়েছিলেন আনসার আলী। বাড়ির পাশে তারও একটা বড় দোকান ছিল। আইলায় সবকিছু ভেসে যাওয়ার পর নিজের ও শ্বশুরবাড়ির ১৩ জন সদস্য নিয়ে দোকানেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন প্রায় দেড় বছর। শেষ পযন্ত তাকেও ছাড়তে হয়েছে এলাকা। এখন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কৈয়া বাজারের কাছে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন তিনি। আর জীবিকা নির্বাহ করতে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালান।
গুগল আর্থের ২০০৮ সালের চিত্র থেকে দেখা যায়, আইলার সময় যে এলাকাটি ভেঙেছে, সেই এলাকাটিতে বেশ জনবসতি ছিল। মোবারক হোসেন ও আনসার আলী সেখান থেকে তাদের বাড়ি খুঁজে বের করে দেখান। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের চিত্র থেকে দেখা যায়, সেই জনবসতির কিছুই নেই। তাদের বাড়ির মাঝ বরাবর একটি বড় খাল নদীর সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। লম্বা হয়ে সেই খাল চলে গেছে একেবারে গ্রামের মধ্যে। আইলায় নদী ভেঙে ওই খালের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তারা। ২০১৩ সালের দিকে ওই খালের পানি আটকাতে বেশ বড় এলাকা ঘিরে রিং বাঁধ দেওয়া হয়। সেটি এখন পরিচিত হারেজখালী ক্লোজার নামে।
[caption id="attachment_2216" align="aligncenter" width="884"]
কোথায় বাড়ি ছিল তা দেখাচ্ছেন আনসার আলী[/caption]
মোবারক হোসেন ও আনসার আলীকে তাদের নিজের এলাকায় নিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়। মোবারক হোসেন অসুস্থ থাকায় তাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি, তবে আনসার আলী গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাকে দেখে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। কেউ মামা, কেউ চাচা আবার কেউ ভাই বলে জড়িয়ে ধরেন। কোথায় তার বাড়ি ছিল, কোথায় তার দোকান ছিল সেগুলো ঘুরে ঘুরে আমাদের দেখান।
কামরুল সরদারের বাড়ি কয়রা উপজেলার বামিয়া গ্রামে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর আর এলাকায় থাকতে পারেননি তারা। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে খুলনায় চলে আসেন। এখন খুলনা নগরের বাগমারা সবুজবাগ এলাকায় একজনের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে আছেন। কামরুল সরদার ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাতেও সংসারের টানাপোড়েন লেগে থাকায় দুই ছেলেকে কাজে নামিয়েছেন।
[caption id="attachment_2217" align="aligncenter" width="813"]
বর্তমান হারেজখালী ক্লোজার ও শাকবাড়িয়া নদী, গত মে মাসে ড্রোন দিয়ে তোলা[/caption]
বড় ছেলের নাম আব্দুর রহিম বাদশা, বয়স ১৫-১৬ বছরের মতো, কিছুটা শারীরিক প্রতিবন্ধী। পঞ্চম শ্রেণি পযন্ত পড়াশুনা করেছে সে। আর ছোট ছেলে হোসাইন সরদারের বয়স মাত্র সাড়ে ৮ বছর। স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে প্রতিদিন সকালে তাঁদের ছুটতে হয় পপকর্ন, চানাচুর, বাদাম ও বুটভাজা বিক্রি করতে। নিরালা এলাকার বিভিন্ন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে এসব বিক্রি করে তারা। হোসাইনের ভাষায় -এটা হলো তার ব্যবসা। বাবাই তাকে এই ব্যবসায় নামিয়েছে।
হোসাইনের মা লতিফা পারভিন জানান, জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে কাজের সন্ধানে চার বছর আগে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন খুলনা শহরে। হোসাইনকে পড়ালেখা না করিয়ে কাজে পাঠিয়েছেন কেন- জিজ্ঞাসা করতেই লতিফা পারভিন বলেন, ‘ওর ব্রেন ভালো। দুই ভাইবুনির খরচ দিয়ে পারতিছি নে, তাই কলাম মেয়েডারে একটু শিখায়। মেয়েডারে তো পরের বাড়ি দিয়া লাগবি। এর জন্য ওরে আর পড়াশুনো করাইনি। কাজেকর্মে গিয়ে যা হোক কমবেশি বিচাকিনা করুক।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা টানা চার বছর ধরে বেড়েছে। দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। দুর্যোগে বাস্তুচ্যুতির বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। মূলত বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ঘরহারা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। নরওয়েভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) প্রকাশিত বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত প্রতিবেদন-২০২৫-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪ লাখ। এর আগের বছর (২০২৩ সালে) দুর্যোগের কারণে সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ। ওই বছরও বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ বেড়ে ২৪ লাখ হয়েছে। মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যায় এটা দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে বন্যায় এবং ২০২০ সালে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে এর চেয়ে বেশি মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছিলেন।
ওই সংস্থা ২০০৯ সালের আইলার পর খুলনা, সাতক্ষীরা ও বরগুনায় একটি জরিপ পরিচালনা করে। ওই জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইলার আঘাতে বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। শুধু খুলনা, সাতক্ষীরা ও বরগুনা অঞ্চলে কয়েক হাজার পরিবার চিরতরে ভিটেমাটি হারায়। জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো জানায়, এসব মানুষের একটি বড় অংশ এখনও নিজেদের গ্রামে ফেরত যেতে পারেনি।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০২১ সালের ‘গ্রাউন্ডসওয়াল’ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বাংলাদেশে এক কোটিরও বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে খুলনার উপকূলীয় এলাকা।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলবায়ু নিয়ে নতুন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) আর্থ, অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের একদল গবেষক। তারা বলছেন, বাংলাদেশে বড় ধরণের ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। আগে যেমন বড় ঝড় ১০০ বছরে একবার হতো, এখন তা ১০ বছরেই হতে পারে। এই ঝুঁকি অঞ্চলভেদে ও মৌসুমভেদেও ভিন্ন হতে পারে।
চলতি বছরের ১১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ান আর্থ নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হলো: ভবিষ্যতের ঝুঁকি বোঝার জন্য শুধু অতীতের পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করা যাবে না। জলবায়ু এরইমধ্যে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পুনরাবৃত্তির হার বাড়ছে। গবেষণার ফলাফল দেখায়, যেসব ঝড়-জোয়ারকে আগে ১০০ বছরে একবারের ঘটনা বলে ধরা হতো, সেগুলো এই শতাব্দীর শেষের দিকে প্রতি ১০ বছর বা তারও কম সময়ে একবার করে ঘটতে পারে।’
১৯৪৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতি দেড় দশক ধরে হিসাব করে দেখা গেছে, ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সময়ে ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তি হয়েছে ২০টি। সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সময়ে। এ সময় ৫২টি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরে। এরপরই রয়েছে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯২ সাল। এ সময়ে উৎপত্তি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ছিল ৩০। ১৯৯৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সময়ে ২২টি, এরপর ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৪টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়েছে।
২০২১ সালে নাসা সেন্টার ফর ক্লাইমেট সিমুলেশনের (এনসিসিএস) করা ‘এক্সপ্লোরিং পাস্ট অ্যান্ড ফিউচার ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস ইন দ্য বে অব বেঙ্গল উইথ হাই অ্যান্ড কম্পিউটিং’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘উষ্ণ জলবায়ুর কারণে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা প্রত্যাশিত সংখ্যার চেয়ে কমে যেতে পারে। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ুর পরবর্তী সময়ে বেশি শক্তির ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের ওপর।’
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.