দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
ঢাকাTuesday , 17 June 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্যপ্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ প্রতিবেদন
  11. রাজনীতি
  12. লাইফস্টাইল
  13. শিক্ষা
  14. সারাদেশ
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মসজিদে নববীসহ বিশ্বের বিখ্যাত সব মসজিদে শোভা পাচ্ছে যার ক্যালিগ্রাফি

বার্তা কক্ষ
June 17, 2025 12:07 pm
Link Copied!

উসমানীয় ও ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিতি তুর্কি ক্যালিগ্রাফার হাসান জেলেবি। তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ইসলামী ক্যালিগ্রাফির ঐতিহ্য রক্ষায়।

 

উসমানীয় ক্যালিগ্রাফির প্রাচীন ধারা নতুন করে প্রাণ পেয়েছিল তার হাতে। তিনি এ শিল্পকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন নিজ প্রচেষ্টায়। তার হাতের ক্যালিগ্রাফি সৌদি আরবের মসজিদে নববী, ইস্তানবুলের নীল মসজিদ, জেরুজালেমের কুব্বাতুস সাখরা, লস অ্যাঞ্জেলেসের কিং ফাহাদ মসজিদসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মসজিদে শোভা পাচ্ছে।

 

ক্যালিগ্রাফির গুরু খ্যাত হাসান জেলেবি ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইস্তানবুলে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানান।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে বেঁচে আছে তার শিল্প 

হাসান জেলেবি প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে ক্যালিগ্রাফির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির ধারক-বাহক হিসেবে কাজ করছেন।

হাসান জেলেবির ছাত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্যালিগ্রাফার আয়তেন তিরিয়াকি বলেন, হাসান জেলেবির মতো অন্য কারো আর বিশ্বের বিখ্যাত সব মসজিদে ক্যালিগ্রাফির কাজ করার এবং এতো এতো শিক্ষার্থী তৈরির সুযোগ তৈরি হয়নি।

ক্যালিগ্রাফির গুরু হাসান জেলেবির জন্ম ও শিক্ষা 

হাসান জেলেবি ১৯৩৫ সালে তুরস্কের এরজুরুমে জন্ম জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার জন্মের সময়টাতে উসমানীয় ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে যেতে বসেছিল। তিনি ছিলেন হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের একনিষ্ঠ অনুসারী। তিনি প্রাচীন উসমানীয় ধারার শেষ দিককার একজন খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার হামিদ আইতাচের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

আয়তেন তিরিয়াকি বলেন, তিনি ছিলেন ক্লাসিক্যাল ধারার খাতাত (ক্যালিগ্রাফার)। তিনি বিভিন্ন ধরণের ক্যালিগ্রাফি জানতেন, লিখতেন ও শেখাতেন। তার স্মৃতি শক্তি ছিল খুবই প্রখর, তিনি উপমা, গল্প, স্মৃতিচারণার মাধ্যমে শেখাতেন।

বিশেষ দক্ষতা : মসজিদের ক্যালিগ্রাফি

হাসান জেলেবির সিরীয় ছাত্র মুহাম্মদ এনেস হুরি (সামি) বলেন, জেলেবি ছিলেন উসমানীয় ধারার প্রকৃত উত্তরসূরি। তিনি স্থাপত্যের সঙ্গে ক্যালিগ্রাফিকে এমনভাবে মিলিয়ে দিতেন যেন তা স্থাপনার অঙ্গ হয়ে ওঠতো।

তার ক্যালিগ্রাফি শুধু অলঙ্করণ ছিল না, বরং প্রাণবন্তভাবে মসজিদ ও স্থাপনার সৌন্দর্য বাড়াতো। তিনি মসজিদে নববীর ক্যালিগ্রাফি পুনঃস্থাপন করেছেন এবং জেদ্দায় ওআইসি ভবনের ক্যালিগ্রাফি লেখেছেন।

প্রদর্শনী ও শিক্ষা কার্যক্রম

১৯৮২ সালে আইআরসিআইসিএ-তে জেলেবির প্রথম একক প্রদর্শনী হয়। এরপর মালয়েশিয়া ও জর্ডানে প্রদর্শনী করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি সৌদি আরবে নবনির্মিত কুবা মসজিদে এক বছর ধরে ক্যালিগ্রাফি লিখেছেন। ১৯৯২ সালে কুয়ালালামপুরে সেমিনার ও প্রদর্শনী করেন।

১৯৯৪ সালে ক্যালিগ্রাফি শিল্পে ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি শিক্ষকতা করে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে সনদ দিয়েছেন।

তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ফর কালচার অ্যান্ড আর্টস এবং নেজিপ ফাজিল সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন।

‘ধৈর্যের বস্তা থাকলে এসো’

ক্যালিগ্রাফি শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা, বিনয় ও ধৈর্যশীলতা তাকে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে অমর করে রেখেছে। শিক্ষার্থীদের তিনি বলতেন, ‘ধৈর্যের বস্তা থাকলে এসো’।

দক্ষিণ আফ্রিকান ছাত্র মুহাম্মদ হোব বলেন, জেলেবি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ছিলেন। শিক্ষার্থীদের কখনো ভুলের কারণে তিরস্কার করতেন না তিনি। ভালো দিকগুলো তুলে ধরে উৎসাহ দিতেন। বলতেন—আদর্শ অক্ষরের গঠন বুঝতে শেখো, তার পরই নতুন ধারা বা শৈলীতে যাও।

‘অভিভাবক জেলেবি’

জেলেবি শুধু শিল্পী ছিলেন না, ছিলেন একজন অভিভাবকসুলভ মুরুব্বি। মুহাম্মদ হোব স্মরণ করে বলেন, ‘আমার বিয়ের প্রস্তাবটি তিনিই দিয়েছিলেন এবং বিয়েটাও তিনিই পড়িয়েছিলেন। এমনকি মেয়ের নামও তিনিই রেখেছিলেন। আমার মেয়ে তাকে ‘দাদা’ বলে ডাকত।’

চিরস্থায়ী প্রভাব

হাসান জেলেবির জীবন ইসলামী ক্যালিগ্রাফি শিল্পের জগতের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তার ছাত্রদের হাত ধরে আজ তার কাজ বিশ্বের মসজিদ ও শিক্ষাঙ্গনে বেঁচে আছে। তার প্রতিটি কলমের আঁচড় যেন একেকটি ইতিহাসের স্পর্শ। এক অনন্ত কালি, যা কখনও ফুরোবে না।

সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড