ঈদের দিন থেকে চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল টাঙ্গাইলের আনোয়ার হোসেনের। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে দেখেন হাসপাতাল বন্ধ। নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের নিচতলার বেঞ্চেই রাত কাটান তিনি।
কিশোরগঞ্জের সাদিয়া দুবার হাসপাতালে এসে ফিরে গিয়ে আবার এসেছেন আশায় বুক বেঁধে- যদি খুলে হাসপাতাল! নোয়াখালীর গনি নামে এক ব্যক্তি চোখে কিছুই দেখছেন না, হাসপাতালের বন্ধ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে শুধু প্রহর গুনছিলেন কখন খুলবে।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা এমন অসংখ্য রোগী অপেক্ষার প্রহর গুনছেন গত ১৮ দিন ধরে।
অবশেষে গতকাল শনিবার (১৪ জুন) হাসপাতালের দরজা খুলেছে, ফিরেছেন চিকিৎসক-নার্সরা। আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে সেবা। ফলে রোগীদের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি। অনেকেই বলছেন, ‘চোখে যেন আলো ফিরেছে চিকিৎসা সেবা ফিরে আসায়।’
রোববার (১৫ জুন) সকালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের সব সেবা শুরু হয়েছে। চিকিৎসক-নার্স সবাই ব্যস্ত সেবাদানে। রোগীরাও লাইন ধরে টিকিট কেটে সেবা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক মানুষ। কেউ এসেছেন চোখের ব্যথা নিয়ে, কেউ বা অপারেশনের সময় ঠিক করতে, আবার কেউ পুরোনো অসুস্থতার চেকআপের জন্য। ফটকের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে রোগীদের ভিড়। বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। জরুরি বিভাগেও ছিল রোগী-স্বজনের আনাগোনা। পেছনের ১৮ দিনের ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে সবাই যেন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুরোদমে হাসপাতাল চালু হওয়ার পর আজ ভোর থেকেই রোগী ও স্বজনদের ভিড় বাড়তে শুরু করে হাসপাতালের মূল ফটকে। বেলা ১১টার দিকেই বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় কয়েকশতে। তখনো টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন দেখা যায়।
সেবা বন্ধ থাকায় আবাসিক হোটেলে থেকে অপেক্ষা
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থেকে আসা সাদিয়া আক্তার বললেন, ‘আমি গত এক মাস ধরে চোখের যন্ত্রণায় ভুগছি। ঈদের আগে একবার ঢাকায় এসেছিলাম। তখন হাসপাতাল বন্ধ থাকায় দুই দিন অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু ব্যথা কমেনি। ঈদের পর আবার ঢাকায় আসি। তখনও জানানো হয় যে চিকিৎসা পুরোপুরি শুরু হয়নি। তাই কয়েকদিন একটি আবাসিক হোটেলে থেকে অপেক্ষা করি। আজকে সকালবেলা হাসপাতালে চলে এসেছি। চিকিৎসা শুরু হয়েছে দেখে খুব ভালো লাগছে। এই সেবা যেন আর বন্ধ না হয়। কারণ, আমাদের মতো গরিব মানুষদের কাছে এই হাসপাতালই শেষ ভরসা।’