তফসিল ঘোষণা – জাতির উদ্দেশে ভাষণে কী বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ তারিখ ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা বললেন সিইসি

প্রায় ১২ মিনিটের ভাষণে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সিইসি বলেন, স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ছাত্র গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত গণতন্ত্র রক্ষা ও সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন, আহত বা নির্যাতিত হয়েছেন—তাদের প্রতি নির্বাচকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত সুস্থতার প্রার্থনাও করেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের শক্তি হলো স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা। সংবিধান জনগণকেই রাষ্ট্রের মালিকানার একমাত্র উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই মালিকানা প্রতিষ্ঠার প্রধান মাধ্যমই নির্বাচন। কিন্তু অতীতে মানসম্মত নির্বাচনের ঘাটতি অনেক সময় আমাদের সামষ্টিক আশা–আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষুণ্ন করেছে।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান–পরবর্তী অঙ্গীকার

নাসির উদ্দিন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের রক্তঝরা প্রেক্ষাপটে আমাদের অঙ্গীকার—একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। এতে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

ভোটার তালিকা ও সংস্কার

গত এক বছরে প্রায় ৪৫ লাখ ভোটারকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং ২১ লাখ মৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নারী ভোটারের বাদ পড়ার ফলে যে ব্যবধান তৈরি হয়, সচেতনতা বাড়িয়ে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে।

তিনি জানান, আইন সংশোধনের মাধ্যমে ভোটার যোগ্যতার তারিখ নির্ধারণের ক্ষমতা কমিশনের হাতে এসেছে। এসব প্রস্তুতি শেষ করে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন ভোটারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন এবং নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭ হাজার ৯৪২ জন।

নির্বাচনব্যবস্থা শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক করতে বিভিন্ন আইনি সংস্কার শেষ হয়েছে। আচরণবিধি, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ নানা কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে—যা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে।

কেন এই নির্বাচন ‘অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ’

সিইসি চারটি কারণ উল্লেখ করেন—

১. গণতান্ত্রিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়নের নির্বাচন। প্রথমবার গণভোটও একই দিনে হবে।
২. রাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সুযোগ।
৩. দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা।
৪. প্রথমবার প্রবাসী ও কারাগারে থাকা ভোটারসহ সরকারি কর্মচারীরা কার্যকর পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।

প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে ভোটের সুযোগ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খোলা থাকবে।

ভোটারদের উদ্দেশে সিইসির আহ্বান

তিনি বলেন, ভোট শুধু অধিকার নয়—এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব। ভয়ভীতি, প্রলোভন বা কোনো ধরনের চাপের ঊর্ধ্বে উঠে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভোট দিতে আসুন।

ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তির বিষয়ে সতর্কতা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারের বিষয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বাড়ছে। প্রতিপক্ষকে হেয় করা বা নারী বিদ্বেষমূলক প্রচারণা কঠোরভাবে দমন করা হবে। অসত্য তথ্য শেয়ার করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

প্রার্থীদের উদ্দেশে

আচরণবিধি মেনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। ভোটারদের আস্থা অর্জনই উচিত প্রার্থীদের প্রধান লক্ষ্য।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে

তিনি বলেন, নিরপেক্ষতা, সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন। কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না।

তফসিল

• ভোটগ্রহণ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬, সকাল ৭:৩০–বিকেল ৪:৩০

• মনোনয়ন জমা: ২৯ ডিসেম্বর

• মনোনয়ন বাছাই: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ – ৪ জানুয়ারি ২০২৬

• আপিলের শেষ তারিখ: ১১ জানুয়ারি

• আপিল নিষ্পত্তি: ১২–১৮ জানুয়ারি

• প্রার্থিতা প্রত্যাহার: ২০ জানুয়ারি

• প্রতীক বরাদ্দ: ২১ জানুয়ারি ২০২৬

• প্রচারকাল: ২২ জানুয়ারি – ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭:৩০