হাড়ের ক্যানসার মারাত্মক কিন্তু তুলনামূলকভাবে বিরল একটি রোগ। সমস্যা হলো, এটি অনেক সময় এমনভাবে শুরু হয়, যেটা সাধারণ ব্যথা-বেদনা, ক্লান্তি বা বয়সজনিত পরিবর্তন বলেই আমরা ধরে নিই। অথচ শরীর আগেই ইঙ্গিত দেয়। সেই ইঙ্গিতগুলো যদি বুঝে নেয়া যায়, তাহলে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।
চলুন জেনে নেই হাড়ের ক্যানসারের এমন ৫টি উপসর্গ, যেগুলো আমরা প্রায়ই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করি বা একেবারেই পাত্তা দিই না।
১. গভীর ব্যথা, যা রাতে বাড়ে
অনেক সময় হাতে-পায়ে একটানা অল্প ব্যথা হয়। এটা আমরা ভুল করে ভাবি, হয়তো বেশি হাঁটাহাঁটি করেছি, কষ্ট করে বসেছিলাম বা ঘুমের পজিশন ভালো ছিল না।
এর ফলে হাড়ের ক্যানসারে এই ব্যথা শুরুতে খুব তীব্র নয়। বরং গভীর ও কন্টিনিউয়াস ব্যথা হিসেবে শুরু হয়, বিশেষ করে রাতে বা বিশ্রামের সময় বাড়ে। যেহেতু এটি টিউমারের চাপে হয় এবং শরীর বিশ্রামে থাকলে সেটা বেশি অনুভব হয়, তাই সাধারণ ব্যথা থেকে এটা আলাদা।
২. হঠাৎ কোনো অংশে ফোলা বা চাকা দেখা দেয়া
হাত-পায়ে বা শরীরের অন্য কোথাও হঠাৎ ফোলা দেখা দিলে আমরা ধরে নিই, এটা বুঝি কোন আঘাত, কামড় বা চর্মরোগ।
এর ফলে হাড়ের ক্যানসারে টিউমার ধীরে ধীরে বাড়ে এবং তার চারপাশে চাকা বা ফোলাভাব দেখা দেয়। প্রথম দিকে ব্যথাহীন থাকায় আমরা ভুল করি। পরে সেটি শক্ত হয়ে ব্যথা করতে পারে। তবে তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই ব্যথাহীন হলেও অস্বাভাবিক ফোলাভাব অবহেলা করা উচিত নয়।
৩. সামান্য ধাক্কায় হাড় ভেঙে যাওয়া
বয়স হলে বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে হাড় দুর্বল হয়, এটা আমরা জানি। কিন্তু অনেক সময় একটুখানি চাপেই হাড় ভেঙে যায়—যা স্বাভাবিক নয়। এর ফলে হাড়ের ক্যানসারে টিউমার হাড়ের ভিতরের গঠন দুর্বল করে দেয়। ফলে অল্প আঘাতেও হাড় ভেঙে যেতে পারে। একে বলা হয় ‘প্যাথলজিক ফ্র্যাকচার’। এটা শুধু দুর্বলতা নয়, বরং ক্যানসারেরও ইঙ্গিত হতে পারে।
৪. সাধারণ ক্লান্তি নয়, অস্বাভাবিক পরিশ্রান্তি
আজকাল সবাই ব্যস্ত, কাজের চাপও বেশি—ক্লান্তি স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কখনো এমন ক্লান্তি হয়, যা ঘুমিয়েও কাটে না।
এর ফলে হাড়ের ক্যানসার রক্তকণিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। এতে রক্তশূন্যতা হয় এবং ক্লান্তি বেড়ে যায়। এটা এমন ক্লান্তি, যাতে ছোট কাজও পাহাড় সমান মনে হয়।
৫. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া ও খিদে না পাওয়া
কেউ কেউ ওজন কমে গেলে খুশি হন ভাবেন ডায়েটের ফল। কিন্তু যখন খাওয়া-দাওয়া ঠিক আছে, তবুও ওজন কমছে তখন সেটা চিন্তার বিষয়।
এর ফলে ক্যানসার শরীরের বিপাকক্রিয়ার গতিপথ পাল্টে দেয়। এতে শরীর নিজের শক্তি নিজেই নষ্ট করতে থাকে। হাড়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রেও এটি ঘটে। খিদে কমে যায় এবং অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস শুরু হয়।
এই উপসর্গগুলো দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে সচেতন হওয়া জরুরি। যে কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ এক মাসের বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ আগেভাগে ধরা পড়লে হাড়ের ক্যানসারের চিকিৎসা অনেকটাই সম্ভব।