বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস শুধু একটি সাধারণ রোগ নয়, বরং তা এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সকল কারণেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, দিনের বেলায় স্পষ্ট কোনো উপসর্গ দেখা না গেলেও, অনেক সময় ঘুমের মধ্যে শরীর ডায়াবেটিসের প্রাথমিক সতর্কবার্তা দিতে শুরু করে। এসব সংকেত সম্পর্কে সচেতন থাকলে আগেভাগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। চলুন জেনে নিই ঘুমের সময় শরীর কোন কোন পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত দিতে পারে—
১. ঘুমিয়ে ওঠার পরও ক্লান্তি ও দুর্বলতা
রাতভর ঘুমের পরও যদি শরীর ভারী লাগে বা ক্লান্তি দূর না হয়, তাহলে তা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ডায়াবেটিসের পূর্বাভাস হতে পারে। ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ না করলে কোষে যথাযথভাবে গ্লুকোজ প্রবেশ করে না, ফলে শরীর শক্তি থেকে বঞ্চিত হয় এবং দুর্বলতা অনুভব করে।
২. ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
ঘুমের সময় হঠাৎ অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া বা ঘামে ভিজে ঘুম ভেঙে যাওয়া হতে পারে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ— অর্থাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া। এটি ডায়াবেটিসের একটি গুরুত্বপূৰ্ণ সতর্কবার্তা।
৩. রাতে বারবার প্রস্রাবের প্রয়োজন
রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব পেলে কিংবা ঘুম ভেঙে বারবার বাথরুমে যেতে হলে, সেটি ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকলে তা মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়।
৪. ঘুমের সময় তীব্র পিপাসা লাগা
প্রচুর প্রস্রাব হওয়ার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়, যার কারণে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ তৃষ্ণা অনুভব হয় বা মুখ শুকিয়ে যায়। ঘুমের মাঝে পানির খোঁজে উঠতে হলে, তা এক ধরনের সতর্ক সংকেত।
৫. হাত-পায়ে ঝিনঝিনি বা অসাড়ভাব
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্নায়ুর ক্ষয় (ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি) দেখা দিতে পারে। এর ফলে ঘুমের সময় হাত বা পায়ে ঝিমঝিম, অসাড়তা, বা পিন–চোখানোর মতো অনুভূতি হতে পারে।
এই লক্ষণগুলো স্পষ্ট হলে করণীয়: এই উপসর্গগুলো বারবার দেখা দিলে একে হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা খুব জরুরি, কারণ এটি চোখ, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
সুস্থ থাকতে যা করবেন
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া
- নিয়মিত শরীরচর্চা করা
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
- ঘুমের সময় শরীরের সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দিন। কারণ ছোট ছোট লক্ষণই ভবিষ্যতের বড় বিপদের পূর্বাভাস হতে পারে। সজাগ থাকলে সুস্থ থাকা সম্ভব।
ঘুম আমাদের শরীরের পুনর্গঠন ও বিশ্রামের সময়। তবে এই সময়েও শরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারে, যেগুলোর মাধ্যমে বড় কোনো রোগের সম্ভাবনা আগে থেকেই আঁচ করা সম্ভব। ঘুমের মধ্যে ঘাম, পিপাসা, বারবার প্রস্রাব, হাত-পায়ের ঝিমঝিম ভাব কিংবা ঘুমিয়েও ক্লান্ত অনুভব এমন লক্ষণগুলো উপেক্ষা করা একেবারেই উচিত নয়। এই সংকেতগুলোকে অবহেলা করা যাবে না। সুস্থ থাকতে প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া