তাজা ফলের মতো পুষ্টিকর খাবার খুব কমই রয়েছে। এ কারণে ঋতু অনুযায়ী বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফল দেখতে পাওয়া যায়। আর মৌসুমী সেসব ফল খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। রকমারি ফল থাকলেও এর মধ্যে অন্যতম একটি বেদানা। টকটকে লাল বেদানা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
বেদানা ফল খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ অনুশ্রী মিত্র। তাহলে এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক এবার।
পুষ্টির ভাণ্ডার:
বেদানায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। এতে ফাইবার, ভিটামিন সি, কে, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো পুষ্টি মিলে। এ কারণে বেদানা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে বিদ্যমান:
বেদানা হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। বিভিন্ন উপায়ে শরীরের যত্ন নিয়ে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ অনুশ্রী বলেন, বেদানায় অ্যান্থোসায়ামিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে এবং ক্রনিক অসুখের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। আবার বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার ঝুঁকিও কমায়।
হার্টের স্বাস্থ্যে উপকারী:
বেদানা খাওয়া হলে এর রস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে। উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। পুষ্টিবিদ অনুশ্রী জানিয়েছেন, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এই বেদানা ফল।
ডায়াবেটিসে উপযোগী:
পুষ্টিবিদদের মতে, বেদানার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এ জন্য ডায়াবেটিসের রোগীরা বেদানা খেতে পারেন। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর থাকে এই ফল। নিয়মিত এই ফল খাওয়া হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিরও আশঙ্কা থাকে না।
হজমে সহায়তা:
বেদানায় ডায়েটরি ফাইবার উপাদান রয়েছে। পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বেদানা উপকারী। তবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় বেদানা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় বেদানা খাওয়া হলে কষ্ট বাড়ে। তবে পেটের জন্য উপকারী এই ফল।
ত্বকের যত্নে বেদানা:
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও অকাল বার্ধক্যকে প্রতিরোধ করে থাকে বেদানা। এই ফলে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে ও বলিরেখা প্রতিরোধ করে। আবার বেদানায় থাকা ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
রক্তশূন্যতার ঝুঁকি কমায়:
অনেকেরই দেখা যায় রক্তশূন্যতার সমস্যা থাকে। পুষ্টিবিদ অনুশ্রী জানিয়েছেন, অনেকের ধারণা বেদানায় আয়রন রয়েছে। মূলত এতে ভিটামিন সি রয়েছে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আয়রনজাতীয় খাবারের সঙ্গে বেদানা খাওয়া হলে শরীরে আয়রন শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে ও রক্তশূন্যতার ঝুঁকিও কমে।
কখন খাওয়া উচিত:
পুষ্টিবিদ অনুশ্রী জানিয়েছেন, সকালে নাশতার পর এবং দুপুরে খাবার খাওয়ার আগে বেদানা খেতে পারেন। দুপুরে খাবারের পর বিকেল ৪টার দিকেও খেতে পারেন। উপকারের জন্য বেদানার খোসা ছাড়িয়ে গোটা দানা চিবিয়ে খাওয়া উচিত। এর রসও খাওয়া যায়। আবার স্ন্যাকস ও ডেজার্ট হিসেবেও খেতে পারেন। চাইলে টক দই, ওটস, স্মুদি, ফ্রুট সালাদ ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন বেদানা।