এক সপ্তাহের দীর্ঘ মৃত্যুঝুঁকির লড়াই শেষে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক, দেশপ্রেমিক ও আপসহীন সংগ্রামী যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই যেন থমকে যায় সময়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মুহূর্তেই নীরব শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফেসবুক টাইমলাইন ভরে ওঠে দোয়া, স্মৃতি আর ভারী হৃদয়ের বিদায়বার্তায়। জাতি হারায় এক সাহসী কণ্ঠ, এক অদম্য স্বপ্নবাজকে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঠিক এক দিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাদি মৃত্যুকে ঘিরে তার দর্শনের কথা অকপটে তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন,
“যখন সবাই মৃত্যু ভয় পায়, আমি চাই হাসিমুখে আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে। ইনসাফের হাসি নিয়ে আমার রবের সামনে দাঁড়াতে চাই।”
জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ—এই বিশ্বাসে অবিচল থেকে তিনি আরও বলেন,“যিনি রাজনীতি করেন, যিনি বিপ্লবী—তার মৃত্যু হওয়া উচিত সংগ্রামের ভেতর দিয়ে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক উত্তাল মিছিলে আমি সামনে আছি। হঠাৎ একটি বুলেট এসে আমার বুকে লাগল, আর আমি হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে গেলাম।”
দীর্ঘ জীবন নয়, অর্থবহ জীবন—এই ছিল শরিফ ওসমান হাদির দর্শন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সময়ের দৈর্ঘ্য নয়, প্রভাবই আসল। তার ভাষায়,“৫০ বছর বেঁচে কোনো ইমপ্যাক্ট না থাকলে সে জীবন অর্থহীন। পাঁচ বছরে যদি ৫০ বছরের প্রভাব তৈরি করা যায়—সেটাই সফলতা। আমরা ইনসাফের চাষ করতে চাই। এমন এক প্রজন্ম রেখে যেতে চাই, যেন আমার মৃত্যুর পরও এই লড়াই থেমে না যায়। কিয়ামত পর্যন্ত বাংলাদেশে এই সংগ্রাম চলুক।”
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সাবেক এই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সেখানেই দীর্ঘ এক সপ্তাহের মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।



