অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ১৯ নভেম্বর দিল্লি রওনা হচ্ছেন। ভারত মহাসাগরের পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের এই বৈঠকটি ২০ নভেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে তিনি দুই দিনের একটি ওয়ার্কিং ভিজিটে যাচ্ছেন।
সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে যে খলিলুর রহমানের সফর নিশ্চিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের একটি সূত্রও সফরটি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।
দিল্লিতে অবস্থানকালে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আলাদা করে বৈঠক হবে কি না—বাংলাদেশি কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে ভারতীয় একটি সূত্র বলছে, আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সরাসরি ডায়ালগের আগ্রহ বাড়ছে। ফলে ২০ নভেম্বরের সম্মেলনের বিরতিতে একটি সংক্ষিপ্ত মিটিং হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের আগস্টে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হবে দ্বিতীয়বার কোনো উপদেষ্টার দিল্লি সফর। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ইন্ডিয়া এনার্জি উইকে যোগ দিতে ভারত যান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় এক মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উদ্যোগে গত ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়। এ বছরের এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌজন্য সাক্ষাৎও হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক, যৌথ নদী কমিশনের টেকনিক্যাল মিটিং, মে মাসে কনস্যুলার সংলাপ এবং জুনে বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ভারত সেগুলোর প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।
কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ হলো ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি বহুপক্ষীয় আঞ্চলিক সিকিউরিটি প্ল্যাটফর্ম। সদস্য দেশগুলো—ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মরিশাস ও বাংলাদেশ; সেশেলস পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত আছে। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে এই ফোরামের পূর্ণ সদস্য হয়। একই বছরের আগস্টে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো শ্রীলঙ্কার রাজধানীতে স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় সনদ ও সমঝোতা স্মারকে সই করে।
ফোরামটির মূল অগ্রাধিকার হলো আঞ্চলিক নিরাপত্তা শক্তিশালী করা—বিশেষ করে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ প্রতিরোধ, মানব পাচার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন, সাইবার নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান, নীতিগত সমন্বয় এবং সক্ষমতা উন্নয়ন এই কাঠামোর মূল ডেলিভারেবল হিসেবে বিবেচিত।
সচিবালয় কলম্বোতে থাকলেও, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পর্যায়ক্রমে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করা হয়।



