বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। রোববার (২১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
চিঠিটি দিয়েছে এইচআরডব্লিউ, বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), বিশ্বজুড়ে নাগরিক সমাজের অধিকার রক্ষায় কাজ করা দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক সংস্থা সিভিকাস, রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন থাইল্যান্ডভিত্তিক ফোরটিফাই রাইটস, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
১. প্রেক্ষাপট ও কৃতজ্ঞতা:
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়ায় আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জুলাই বিপ্লব ও শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার মৌলিক স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইন সংস্কার ও গুমসহ অন্যান্য নিপীড়নের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
২. মানবাধিকার ও নির্বাচন:
২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে মানবাধিকার সুরক্ষায় পদক্ষেপ বাড়ানো, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহ্বান।
৩. নিরাপত্তা খাতের সংস্কার:
র্যাব বিলুপ্ত করা, ডিজিএফআইয়ের ক্ষমতা সীমিত করা, নিরাপত্তা বাহিনীর জবাবদিহি ও সংস্কার নিশ্চিত করা।
৪. জবাবদিহি ও বিচার:
গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা, আইসিটিকে স্বাধীনতা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখা।
৫. গুমবিরোধী পদক্ষেপ:
গুমকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, তদন্ত কমিশনকে ক্ষমতায়ন ও পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
৬. মানবাধিকার কমিশনের সংস্কার:
এনএইচআরসিকে প্যারিস নীতির আলোকে স্বাধীন ও কার্যকরভাবে সংস্কার করা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।
৭. মতপ্রকাশ ও আইনের সংস্কার:
সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানে সংশোধন বা বাতিল করা।
৮. তথ্য ও গোপনীয়তা সুরক্ষা:
ব্যক্তিগত উপাত্ত ও জাতীয় উপাত্ত অধ্যাদেশ সংশোধন করে নাগরিক অধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষা করা।
৯. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা:
সাংবাদিকদের নির্বিচার গ্রেফতার বন্ধ করা, হয়রানি প্রতিরোধ ও স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা।
১০. নির্বিচার গ্রেফতার ও মামলা প্রত্যাহার:
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মতপ্রকাশবিরোধী সব মামলা পর্যালোচনা ও খারিজ করা।
১১. রাজনৈতিক স্বাধীনতা:
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা, বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা।
১২. নাগরিক সমাজ ও এনজিও:
এনজিও ব্যুরো ও বিদেশি অনুদান আইন সংস্কার করে নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক তহবিলপ্রাপ্তি সহজ করা।
১৩. রোহিঙ্গা বিষয়:
রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন বন্ধ রাখা, তাদের চলাফেরা, জীবিকা ও শিক্ষার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ/মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) চলমান তদন্তে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করুন, যার মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গকে আইসিসি চাইলে তাকে গ্রেপ্তার এবং এই আদালতের কাছে হস্তান্তরের মতো বিষয় রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.