বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার যৌথভাবে দেশের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উপদেষ্টা পরিষদের সম্মতি পাওয়ার পর এখন নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনাপত্তি নেওয়া হবে। নতুন কোম্পানির নিবন্ধন সম্পন্ন হলে ওই পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ, দায় এবং কর্মীসমূহ নতুন প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থানান্তরিত হবে। জানা গেছে, নতুন ব্যাংকের প্রাথমিক মূলধন হিসেবে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করবে।
নতুন ব্যাংকের জন্য দুটি নাম প্রস্তাবিত রয়েছে— ‘ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক’ ও ‘সম্মিলিত ইসলামিক ব্যাংক’। একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন ব্যাংকটির মালিকানা সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতে থাকবে। প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বিতভাবে কাজ করছে। চলতি সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হবে, যাতে একীভূতকরণ ও নতুন ব্যাংক গঠনের ক্ষেত্রে কোনো আইনগত জটিলতা আছে কি না, তা যাচাই করা যায়। অনুমোদন মিললেই বাংলাদেশ ব্যাংক আগ্রহপত্র (LOI) ইস্যু করবে এবং পরবর্তীতে কোম্পানির নিবন্ধন ও নাম চূড়ান্ত করতে RJSC-তে পত্র পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন থাকায় সরকার চাইলে অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। তবে পাঁচটি ব্যাংকের সম্পদ, দায় ও মানবসম্পদের দক্ষতা যাচাই করতে কিছুটা সময় লাগবে।
একীভূত ব্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রশাসকরা জানিয়েছেন, সরকারি অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার আগে দায়িত্ব গ্রহণ করলে ব্যাংকগুলোতে টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়ে যেতে পারে। প্রশাসকরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার ২০২৫ সালে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ অনুমোদন করেছে। এই আইনের আওতাতেই বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের কাজ করছে। তবে জানা গেছে, সমন্বয়ের ঘাটতি এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে প্রক্রিয়াটি ধীরগতিতে এগোচ্ছে, পাশাপাশি অধ্যাদেশে নির্ধারিত সব ধাপ সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, “একসঙ্গে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। তাই সম্পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এটি বাস্তবায়ন করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কোনো জটিলতা বা প্রশ্ন না ওঠে। বিশেষ করে ছোট গ্রাহকদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা আতঙ্কিত না হন।”

