ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বটি ২০২৭ সালের নারী বিশ্বকাপ ও ২০২৮ অলিম্পিকের বাছাইপর্ব হিসেবেও কাজ করবে, যা বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য বিশ্ব মঞ্চে খেলার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ‘সি’ গ্রুপের তিন ম্যাচের সবকটিতেই জয় তুলে নিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বাহরাইনকে ৭-০, স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ এবং তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে হারিয়ে শীর্ষে থেকেই মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে মেয়েরা। এই তিন ম্যাচে বাংলাদেশ গোল করেছে ১৬টি, আর হজম করেছে মাত্র একটি, সেটিও মিয়ানমারের বিপক্ষে।
বাছাইপর্বে দাপুটে ফুটবল খেললেও এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের লড়াইটা সহজ হবে না। টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়া ১২ দলের মধ্যে ১১ দলের নামই চূড়ান্ত হয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে এই ১১ দলের প্রত্যেকটির অবস্থান বাংলাদেশের ওপরে। এমনকি এখন পর্যন্ত সুযোগ পাওয়া দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই আছে, যারা র্যাঙ্কিংয়ে এক শর বাইরে।
২০২৬ সালের এশিয়ান কাপে আয়োজক হিসেবে খেলবে অস্ট্রেলিয়া, র্যাঙ্কিংয়ে যাদের অবস্থান ১৫ নম্বরে। এ ছাড়া ২০২২ এশিয়ান কাপের শীর্ষ তিন দল হিসেবে বাছাইপর্বে না খেলেই জায়গা করে নিয়েছে চীন (১৭), দক্ষিণ কোরিয়া (২১), এবং জাপানও (৭)। বাকি আটটি দল বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসবে। যার মধ্যে কেবল এ গ্রুপের খেলা বাকি রয়েছে।
বাছাইপর্বে ‘বি’ গ্রুপে ৪ ম্যাচের ৪টিতে জিতে এশিয়ান কাপের টিকিট পেয়েছে ভারত, র্যাঙ্কিংয়ে যাদের অবস্থান ৭০ নম্বরে। এ নিয়ে ১০ম বারের মতো এশিয়ান কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করল ভারতের মেয়েরা। গ্রুপ ‘ডি’–তে সব ম্যাচ জিতে শীর্ষে থেকে এশিয়ান কাপে যাওয়া চীনা তাইপের অবস্থান র্যাঙ্কিংয়ে ৪২। ৩৭ নম্বরে থাকা ভিয়েতনাম গ্রুপ ‘ই’ থেকে পেয়েছে শতভাগ সাফল্য।
গ্রুপ ‘এফ’–এ বাজিমাত করেছে উজবেকিস্তান। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ৩–৩ ব্যবধানে ড্র থাকার পর নেপালকে টাইব্রেকারে ৪–২ গোলে হারিয়ে এশিয়ান কাপের টিকিট পেয়েছে ৫১তম র্যাঙ্কিংধারী উজবেকিস্তান। আর সর্বশেষ গ্রুপ ‘এইচ’ থেকে শতভাগ সাফল্য নিয়ে এশিয়ান কাপের টিকিট পেয়েছে র্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে থাকা উত্তর কোরিয়া।
এই ১১ দল ছাড়া এশিয়ান কাপের টিকিট পাবে আরও একটি দল। গ্রুপ ‘এ’তে থাকা সেই দলগুলোর খেলা এখনো মাঠে গড়ায়নি। আগামীকাল ভুটান–সিঙ্গাপুর ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এই গ্রুপ পর্বের লড়াই, শেষ হবে ১৯ জুলাই। এই গ্রুপের অন্য তিন দল হলো ইরান, জর্দান ও লেবানন।
২০২৬ সালের ১ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার তিনটি শহরের পাঁচটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত আসর। যেখানে চারটি করে দল তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। এই গ্রুপ পর্ব শেষে তিন গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল ও তৃতীয় হওয়া সেরা দুটি দল উঠবে কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর মাঠে গড়াবে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল।
২০২৭ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় নারী বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে সরাসরি খেলবে ৬ দল, আন্ত-মহাদেশীয় প্লে অফ জিতেও সুযোগ পেতে পারে দুটো দল। এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে খেলা ৪ দল সরাসরিই খেলবে বিশ্বকাপে। আর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়া ৪ দল খেলবে দুটো প্লে অফ ম্যাচ। জিতলে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে, আর হেরে যাওয়া দুই দল খেলবে আন্ত-মহাদেশীয় প্লে অফে।
এদিকে অলিম্পিকের বাছাইপর্ব হিসেবেও কাজ করবে ২০২৬ নারী এশিয়ান কাপ। কোনোভাবে গ্রুপ পর্বের বাধা পেরিয়ে যেতে পারলেই মিলবে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকের বাছাইপর্ব খেলার সুযোগ। সেই বাছাইপর্বে দুই গ্রুপে ভাগ খেলবে দলগুলো। দুই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের নারী ফুটবলে সুযোগ পাবে। আফইদা, ঋতুপর্ণারা নিশ্চয়ই সে সুযোগটা দু’হাতেই লুফে নিতে চাইবেন!