
গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে বিশ্ব ব্যর্থ হলে আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশের জলবায়ু বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে পারে—সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা এমন সতর্কতা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৪১–২০৭০ সময়কালে দেশের গড় তাপমাত্রা ১–২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে, আর শতাব্দীর শেষে তা দেড় থেকে সাড়ে ৪ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও নরওয়েজিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলবায়ুর রিপোর্ট ২০২৫’ প্রকাশ করে। পাঁচ ধরনের জলবায়ু সম্ভাবনা ধরে এতে ভবিষ্যতের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা নিয়ে পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, মার্চ–মে সময়ে তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন দেখা দিতে পারে। পশ্চিমাঞ্চলে ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষার আগে টানা ২০ দিন তাপপ্রবাহ থাকার সম্ভাবনাও দেখানো হয়েছে। বর্ষা মৌসুমেও তাপপ্রবাহ বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত করা হয়।
ঢাকার পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে—বছরে অন্তত দুইটি শক্তিশালী তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হতে পারে নগরবাসী। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় দিনের তাপমাত্রা সাড়ে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত বেশি অনুভূত হতে পারে।
তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে শীত মৌসুম আরও সঙ্কুচিত হবে। শতাব্দীর শেষে শীত প্রায় নামমাত্র থাকতে পারে। ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে উত্তর–পূর্বাঞ্চলে মাত্র এক–দুদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ টের পাওয়া যেতে পারে।
বর্ষার বৃষ্টিপাতও বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০৭০ সালের মধ্যে গড় বর্ষার বৃষ্টি ১১৮ মিমি এবং শতাব্দীর শেষে তা ২৫৫ মিমি পর্যন্ত বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অতিবৃষ্টি উত্তর–পূর্বাঞ্চলে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি আরও বাড়াবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলে বছরে সর্বোচ্চ ৫.৮ মিমি পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ বাড়তে পারে, ফলে শতাব্দীর শেষে উপকূলের প্রায় ১৮% এলাকা স্থায়ীভাবে পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সুন্দরবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ অংশ ডুবে থাকতে পারে। এতে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
জলবায়ুর এই পরিবর্তন কৃষি, পানিসম্পদ, গবাদিপশু ও জনস্বাস্থ্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। উৎপাদন কমে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পানিবাহিত রোগ ও অতিরিক্ত গরমে শ্রমজীবী মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রিপোর্ট উপস্থাপনকালে বজলুর রশিদ বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন দ্রুত থামবে না, তাই দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন পরিকল্পনা জরুরি। উপকূল সুরক্ষা, আধুনিক আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও তিনি বলেন।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন মন্তব্য করেন, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশ নয়—কৃষি, জ্বালানি থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ছে। তাই সমন্বিত উদ্যোগই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়।
২০১১ সাল থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও নরওয়ের আবহাওয়া সংস্থা যৌথভাবে এই গবেষণা চালাচ্ছে। নতুন প্রতিবেদনটি তাদের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.