
বিশ্বের মেগাসিটি র্যাংকিংয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে ঢাকা। জাতিসংঘের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে—বাংলাদেশের এই রাজধানী এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
জাতিসংঘের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, আর তার ঠিক পরেই জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। একই সঙ্গে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল নগরীতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে এই শহর।—খবর আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জনসংখ্যার হিসেবে বর্তমানে জাকার্তায় বসবাস করছেন প্রায় ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ। এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকা—যার জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৬৬ লাখে।
আল জাজিরার বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, জাভা দ্বীপের পশ্চিমাংশে অবস্থিত নিম্নাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর জাকার্তা আগের দ্বিতীয় স্থান থেকে উঠে টোকিওকে পেছনে ফেলে এক নম্বরে এসেছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ২০০০ সালের মূল্যায়নে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহরের তালিকায় টোকিও ছিল প্রথমে।
টোকিওর জনসংখ্যা তুলনামূলক স্থিতিশীল—বর্তমানে সেখানে থাকেন প্রায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ। এই কারণেই শহরটি নেমে গেছে তৃতীয় স্থানে। অন্যদিকে নবম স্থান থেকে দ্রুত উঠে দ্বিতীয় স্থানে এসেছে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা। জাতিসংঘের হিসেবে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের এক নম্বর বৃহত্তম শহর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ঢাকার।
জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস ২০২৫ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—যে নগরীতে ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করেন তাকেই মেগাসিটি বলা হয়। বর্তমানে বিশ্বের এমন শহরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩টিতে; ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৮।
এই ৩৩টি মেগাসিটির মধ্যে ১৯টিই রয়েছে এশিয়ায়, আর শীর্ষ ১০-এর ৯টিই এশিয়ার শহর। তালিকায় জাকার্তা, ঢাকা ও টোকিও ছাড়াও রয়েছে ভারতের নয়াদিল্লি (৩ কোটি ২০ লাখ), চীনের সাংহাই (২ কোটি ৯৬ লাখ), চীনের গুয়াংজু (২ কোটি ৭৬ লাখ), ফিলিপাইনের ম্যানিলা (২ কোটি ৪৭ লাখ), ভারতের কলকাতা (২ কোটি ২৫ লাখ) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল (২ কোটি ২৫ লাখ)।
এশিয়ার বাইরে শীর্ষ ১০-এ স্থান পেয়েছে একমাত্র শহর—মিসরের কায়রো, যার জনসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ। এছাড়া ব্রাজিলের সাও পাওলো ১ কোটি ৮৯ লাখ বাসিন্দা নিয়ে আমেরিকা মহাদেশের বৃহত্তম নগরীতে পরিণত হয়েছে। নাইজেরিয়ার লাগোসও দ্রুত প্রসারিত হয়ে সাব-সাহারান আফ্রিকার সর্ববৃহৎ শহর হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকার দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রামাঞ্চল থেকে মানুষের ব্যাপক হারে শহরমুখী হওয়া। ভালো সুযোগের সন্ধান, কর্মসংস্থান, এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা-লবণাক্ততার মতো কারণ অনেককেই শহরে আসতে বাধ্য করছে।
জাকার্তাও একইভাবে জলবায়ু সংকটে চ্যালেঞ্জের মুখে—সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার চাপ শহরটিকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ধারণা করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে জাকার্তার প্রায় এক-চতুর্থাংশই পানির নিচে চলে যেতে পারে।
এই সংকট মোকাবিলায় ইন্দোনেশিয়া সরকার নতুন রাজধানী নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছে। বোর্নিও দ্বীপের পূর্ব কালিমান্তানে ‘নুসান্তারা’ নামে নতুন প্রশাসনিক শহর গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান সেখানে সরলেও জাতিসংঘের ধারণা—২০৫০ সালের মধ্যে জাকার্তায় আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ যুক্ত হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফ মিয়া
অফিস ঠিকানা: বাড়ি নং ১৫ (৬ষ্ঠ তলা), রোড নং ১৯, সেক্টর নং ১১, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
somriddhabangladesh@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. All rights reserved.